তথ্যপ্রযুক্তি

বাড়ছে উচ্চ সিসির স্পোর্টস বাইকের চাহিদা

মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট বাড়ানোর ফলে নতুন নতুন কোম্পানি বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে বাইকপ্রেমীদের বহুল আকাঙ্খিত রয়্যাল এনফিল্ড বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

Advertisement

যদিও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের এগ্রেসিভ লুকিং স্পোর্টস বাইকের প্রতি আকর্ষণ বেশি। বিশেষ করে ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ, সুজুকি জিক্সার, হোন্ডা সিবিআর, টেরো জিপি ওয়ান, ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিন জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে মূলত ৪ থেকে ৫ লাখে টাকার মধ্যে যে বাইকগুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগই স্পোর্টস বাইক। এগুলোর ডিজাইন, গতি, শক্তি, মাইলেজ, এর কারণে সব সময় তরুণদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। আমি নিজে ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ ব্যবহার করি’।

মাহিনের মতো অনেক বাইকার দাবি করেছেন যে এই দুই চাকার যানবাহন তাদের মধ্যে উত্তেজনা এবং আনন্দ অনুভূতি জাগায়।

Advertisement

সুমন তালুকদার নামে আরেকজন বাইকপ্রেমী সম্প্রতি নতুন সুজুকি জিক্সার বাইক কিনেছেন। তিনি বলেন, এই দামে এতো ভালো স্পোর্টস বাইক পাওয়াটা কঠিন। বাইক আসলে আমাকে স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া এটি ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যও বহন করে।

রাজধানীর শনির আখরার ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ সাউথের বিক্রয় প্রতিনিধি অনন্ত জান্নাত বলেন, ‘আজকাল তরুণরা সাধারণ বাইকের চেয়ে স্পোর্টস বাইক কিনতে পছন্দ করেন। ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ এর চাহিদা এই দামের অন্য বাইকগুলোর চেয়ে বেশি’।

‘আমরা সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ টি ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ বিক্রি করি। গত বছর আমরা সপ্তাহে ২-৩ টি এই ধরনের বাইক বিক্রি করেছি। বর্তমানে থাইল্যান্ড, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া আমাদের দেশে আর ওয়ান ফাইভ রপ্তানি করে। আমদানি করা দেশ অনুযায়ী তাদের দাম পরিবর্তিত হয়’ বলে জানিয়েছেন অনন্ত।

আরও পড়ুনবৃষ্টির সময় বাইক ভালো রাখতে যা করবেন

দেশে মোটরসাইকেলের বাজার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০৪টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন হয়েছিল যা ২০১৪ সালে ছিল ৯০ হাজার ৪০১। অর্থাৎ ১০ বছরে মোটরসাইকেল নিবন্ধন সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

Advertisement

ফরচুন বিজনেস ইনসাইটস গবেষণা প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল বাজারটির মূল্য প্রায় ৭৯.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল যা ২০৩২ সালের মধ্যে এটি ১৪০.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। তারা বলছে, ২০২৪-২০৩২ সালে বাজারটি ৬.৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।

২০১৬-১৭ সালে দেশে মোটরসাইকেল সংযোজনকে উৎসাহিত করতে কমপ্লিটলি নকড ডাউন (সিকেডি) মোটরসাইকেল আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সরকার মোটরসাইকেল উৎপাদন শিল্পের উন্নয়নে মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৮ নিয়েছিল যাতে পোশাক রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসে।

এ খাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন প্রায় দুই লাখ কর্মী।

দেশের বাজারে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে বেশ কয়েকটি মডেলের মোটরসাইকেল রয়েছে। এর মধ্যে হোন্ডা সিবিআর রেপসল এর দাম ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ ভি-৩ এর দাম ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, কাওয়াসাকি নিঞ্জা ১২৫ এর দাম ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, কেটিএম ডিউক ১২৫ এর দাম ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যদিও দাম একটু ওঠানামা করে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিশেষ করে রাস্তাঘাট হওয়ার কারণে বাইকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড এর চিফ মার্কেটিং অফিসার শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে মোটরসাইকেল এর বাজার যেভাবে বাড়ার কথা ছিল সেভাবে বাড়েনি’।

আমাদের দেশের বাজার ছিল মূলত ১১০ সিসি, ১২৫ সিসির কমিউটার সেগমেন্টের যার মার্কেট শেয়ার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ ছিল উচ্চতর সিসির বাইকের। উচ্চতর সিসির নতুন এই বাজার ধরতে আমরা নতুন মডেল নিয়ে আসছি। গত মাসেই আমরা হরনেট ২.০ বাজারে নিয়ে এসেছি যার চাহিদা অনেক।

কোভিডের পর অর্থনীতিতে বড়সর ধাক্কা লাগে, ডলারের দাম বেড়ে যায়, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে কমিউটার বাইক মার্কেটের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। কিন্তু উচ্চতর সিসির বাইকের বাজার সেভাবে কমেনি।

বাইকের বার্ষিক বিক্রি একটা সময় ৬.৫ লাখ ইউনিট পর্যন্ত উঠেছিল যা এখন কমে ৪ লাখের একটু বেশি হয়েছে। যদি সরকার মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ আমদানিতে এবং রপ্তানিতে শুল্ক ছাড় দিলে এই বাজার আরও বড় হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএএমএ) এর এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে এই বাজার অনেক সম্ভাবনাময়। যদিও এখন এর প্রবৃদ্ধি একটু কম’।

আমাদের অর্থনীতি যদি একটু স্থিতিশীল হয় এবং বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি যদি ২০ শতাংশ হয় তাহলে ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ১০ লাখ ইউনিট পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব।

ইফাদ মটরসের হেড অব বিজনেস অপারেশন অব রয়্যাল এনফিল্ড অ্যান্ড অ্যাপোলো টায়ারস মুইদুর রহমান তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিন হিসেবে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। সকাল ১০ টা থেকে আমাদের বুকিং চলছে। মাঝে একটু বন্ধ ছিল। রাত ১০ টা পর্যন্ত বুকিং দেওয়া যাবে। আমরা একটু নির্দিষ্ট নম্বর পর্যন্ত বুকিং নিব। কারণ শুধু বুকিং নিলেই তো আর হবে না, এগুলো ডেলিভারি দিতে হবে’।

বাইক ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উচ্চতর সিসির বাইক আমদানি আপাদত বন্ধ আছে। তবে খুব শিগগির বাংলাদেশের বাজারে উচ্চতর সিসির স্পোর্টস বাইক আসবে বলে জানা যায়।

আরও পড়ুনবাইকের পেট্রোল ট্যাঙ্কে পানি ঢুকলে দ্রুত যা করবেনরয়্যাল এনফিল্ডের ই-বাইকে যেসব ফিচার পাবেন

কেএসকে/জেআইএম