দেশজুড়ে

জনজীবন স্বাভাবিক হলেও যাতায়াতের দুর্দশা এখনো কাটেনি

ফেনীতে বন্যার ক্ষত কাটিয়ে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও যাতায়াতের দুর্দশা এখনো কাটেনি। আগস্ট মাসে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সড়ক-জনপথ বিভাগের ফেনী-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দুই মাসেও মেরামত না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফেনী-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের ফেনী অংশের তালতলা থেকে গণিপুর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলাচল করে। বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা সড়কটি উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণসামগ্রী নেওয়া এবং মানুষ চলাচলে একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়কের পিচ-ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফেনী অংশের তালতলা থেকে গণিপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ।

সড়কের বেশির ভাগ অংশের পিচ-পাথর উঠে সুরকি ও বালু বেরিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। ফলে সড়কে যাতায়াতকারী ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিকল হচ্ছে যানবাহন, দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির রতনপুর থেকে গণিপুর পর্যন্ত অংশে বড় বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ডোবায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক সংস্কার কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। প্রায় সময়ই সড়কে যানবাহন অচল হয়ে পড়ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।

Advertisement

জানা যায়, ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলের বিরলী, দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর, কোরাইশমুন্সী, সিন্দুরপুর, অলাতলী, দরবেশেরহাট, গাজীরহাট, কানকিরহাট হয়ে সোনাইমুড়ী পর্যন্ত জনসাধারণের একমাত্র চলাচলের সড়ক এটি। তিনটি জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ সড়কটি বিকল্প বিশ্ব রোড হিসেবে অনুমোদিত। কিন্তু সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে এ অঞ্চলের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

রাজাপুর বাজারের ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, সড়কটি বর্তমানে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তার সমস্যার কারণে হাসপাতালে যেতে অসুস্থ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী ফেনী দারুচ্ছুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদরাসার (দিলপুর) সুপার রহিমা বেগম বলেন, সড়কটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর দুই মাসেও সংস্কারকাজ না করায় এবং বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দরবেশের হাট পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, সড়কটির বেহাল দশার কারণে নিয়মিত কলেজে যাতায়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করে আমাদের কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

Advertisement

অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। গাড়ি চালাতে গিয়ে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

ফেনী পশ্চিমাঞ্চল কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী হক বলেন, এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা মহাবিপাকে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি জমে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, হাঁটাও যায় না। সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে ডোবা হয়ে যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের নজর নেই।

ফেনীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, বন্যায় সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বরাদ্দের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে মেরামত হচ্ছে। ফেনী-সোনাইমুড়ী সড়কের ফেনী অংশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের উন্নয়নকাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। আশা করি শিগগির মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেডএইচ/এএসএম