রাজনীতি

প্রবাসী সরকার গঠন নিয়ে যা বলছে আওয়ামী লীগ ও ভারত

আওয়ামী লীগ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও একই দাবি করে জানান, ওই সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে তথ্য রয়েছে।

Advertisement

তবে আগরতলায় সমাবেশ, প্রবাসী সরকার গঠন ও শেখ হাসিনার উপস্থিতির যে তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে ভারত সরকারও বলছে, এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কেউ এখনও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং ফেনী অঞ্চলের যেসব আওয়ামী নেতা এখনও দেশে অবস্থান করছেন, তারাই ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন ত্রিপুরায় ফ্যাসিবাদের দোসররা জমায়েতের অপচেষ্টা করছে মুজিবনগর সরকার ঘোষণার গুঞ্জনে উত্তাল কুমিল্লা

ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের এমন তৎপরতার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার পক্ষ থেকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর টাউন হল মাঠ থেকে মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবদুল হান্নান মাসুদ।

Advertisement

কী বলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ

আগরতলায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণার এমন তথ্য তারা কোথায় পেলেন, ‘জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের নিজস্ব কানেকশনের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।’

সমাবেশ করার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন বলেও দাবি করেন এই সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ‘শনিবার তারা কুমিল্লার কাছে সীমান্তের এক জায়গাতে মিটিংও করার চেষ্টা করেছিলেন, জানাজানি হওয়ার কারণে যা পরে আর সফল হয়নি।’

তবে ভারতে সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এগুলো সব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা।’

Advertisement

আরও পড়ুন ‘শেখ হাসিনা ভারতেই থাকবেন’ আমার কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো প্রমাণ নেই: রাষ্ট্রপতি মীমাংসিত বিষয়ে সরকারকে বিব্রত না করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এমন দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক সিনিয়র নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোট কথা, কোনোকিছুর ওপর তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) নিয়ন্ত্রণ নেই।’

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা এখন এসব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে পার পাওয়া যাবে না। ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই অন্তর্বর্তী অবৈধ সরকারকে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালানো হচ্ছে, তাতে করে জীবন বাঁচাতে কেউ যদি দেশের বাইরে আশ্রয় নেয়, সেটা কি সে পারে না?’

ভারত কী বলছে

ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ভারত সরকারের একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানায়, ‘কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাবো?’

এ ধরনের দাবির যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ, প্রথমত আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনো সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না দিয়ে করা সম্ভব নয়।

ত্রিপুরার সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, রাজধানী আগরতলায় এ ধরনের কোনো তৎপরতা গত কয়েক সপ্তাহে তাদের আদৌ চোখে পড়েনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তারপর থেকেই তিনি দেশটিতে অবস্থান করছেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

তবে শেখ হাসিনা ভারতে কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। যদিও তিনি ভারত থেকে অন্যদেশে চলে যেতে পারেন বলেও নানা গুঞ্জন রয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একই সঙ্গে তাকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ইএ/জিকেএস