টানা পাঁচ কার্যদিবস দরপতনের পর সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
Advertisement
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে গত সপ্তাহের চার কার্যদিব এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দেওয়ার মধ্যে গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানানো হয়, অতীতের দূরবস্থা ও শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার সুবিধা দেবে।
তবে কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ সংঘটিত হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের জন্য আজ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই এসব কোম্পানির আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে।
Advertisement
এতে আরও বলা হয়, বাজারে লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফ্লোরপ্রাইস আরোপ, সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমায় নানা কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের এ অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেবে সরকারঅর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমন বিজ্ঞপ্তি আসার পর সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে মূল্যসূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫১ পয়েন্ট পড়ে যায়।
তবে লেনদেনের শেষদিকে দাম কমার তালিকা থেকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। বিশেষ করে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখায় অব্যাংকিং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দাম বাড়ার তালিকায় কম প্রতিষ্ঠান থাকার পরও মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
Advertisement
এরপরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ১৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অগ্নি সিস্টেমের ১৬ কোটি ৭২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিক হোটেল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এমএএস/ইএ/এএসএম