বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী। সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগে ডিএনএ নমুনা দেওয়া শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
Advertisement
সামিরা তানজিন বলেন, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ আমার রক্তের নমুনা নিয়েছে। আমার বাবা আব্দুল হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। মরদেহ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর আমার বাবার মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর আমার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য সিআইডি আজ আমাকে ডেকেছে। এখন আব্বুর ডিএনএর ম্যাপিং চলছে।
তিনি বলেন, আমার ডিএনএর নমুনার সঙ্গে আব্বুর ডিএনএর নমুনা মেলাবে। এরপর সিআইডি এই নমুনা মেলানোর ফলাফল দেবে। সিআইডি আমাকে বলেছে এই প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ হতে দু-তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে প্রক্রিয়াটা জটিল, তারা (সিআইডি) বলেছে যত দ্রুত সম্ভব তারা এটা সম্পন্ন করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে বলেন, ‘আমি বলেছি আমার বাবা মারা গেছেন, কিন্তু গত সরকার এটা মেনে নেয়নি। তাহলে কি আমার বাবাকে আমি জীবিত রেখে দেব, তা না হলে কাউকে আমার বাবাকে খুঁজে দিতে হবে। আমার বাবা তো নিরুদ্দেশ থাকতে পারেন না। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে এটার একটি সার্টিফিকেট লাগবে। তিনি তো যেমন-তেমন মানুষ ছিলেন না। তার মৃত্যুর বিষয়টা প্রমাণিত হতে হবে। যে কোনো যেমন-তেমন মানুষেরও মানবিক অধিকার থাকে। আমার বাবার মানবিক অধিকার রক্ষা হয়নি।’
Advertisement
ওই সময় হারিছ চৌধুরীর মরদেহকে এভাবে কেন মাটি দেওয়া হয়েছিল প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই নেতার মেয়ে বলেন, আমার বাবার মরদেহ আমি আমার দাদুর বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমি দেখলাম গণমাধ্যম অহরহ রিপোর্ট করছে মাহমুদুর রহমান নামে হারিছ চৌধুরীর দাফন। এটা আসলে সঠিক নয়।
আমার প্রশ্ন কে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করেছে। আমি শুধু জানি আমি আমার বাবার মরদেহ নিয়ে গিয়েছি সেখানে দাফন হয়েছে। সেখানে যারা দাফন করেছেন তাদের সঙ্গে আমার কখনো কথা হয়নি। ওইখানের হুজুর মহিলা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন না সেটা আমাকে বলা হয়েছিল। আমি তখন সদ্য মৃত বাবার মরদেহ বুকে করে নিয়ে যাওয়া মেয়ে। সে সময় আমি তো কাউকে কিছু বলিনি।
তিনি আরও বলেন, যখন বিষয়টি সবার সামনে আসে, তখন আমার কাছের দুজন সাংবাদিক বিষয়টি জানতে চান। তখন আমি এ বিষয়ে কথা বলি। আমি তো ওইভাবে কাউকে চিনি না। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি তখন আমি তাদের বলেছি হ্যাঁ আব্বু মারা গেছে। আব্বুর দাফন হয়েছে আপনারা যা শুনছেন তা সত্যি। আগের সরকারের প্রতিহিংসার পাত্র ছিল আমার বাবা। তখনকার সময়ে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়েছে।
আমার বাবা গত সরকারের আমলে নির্যাতিত হওয়ার মধ্যে অন্যতম একজন। এ কারণে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে চলে যাননি। তখন ওই সরকারের পক্ষ থেকে অপপ্রচার চালানো হয় যে হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ বলে যে তিনি মারা যাননি মিথ্যা কথা বলছে, যাতে করে ইন্টারপোল থেকে নাম সরানো যায়, যা ইচ্ছা তাই খবর ছড়ানো হলো আব্বুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, মাহমুদুর রহমান নামে আব্বুর মরদেহ কখনোই দাফন করেননি। এছাড়া মানবজমিন পত্রিকায় বাবার মৃত্যু নিয়ে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল সেখানেও এই ধরনের কোনো কথা উল্লেখ করা হয়নি। আমার বাবাকে মাহমুদুর রহমান বলে দাফন করিনি, আমি আমার বাবাকে দাফন করেছি। আমি যখন সত্যি কথা বলি তখন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভয় পেয়ে যায়। যাদের মাধ্যমে আব্বুর মরদেহ দাফন করা হয়েছিল। তখন তারা আমার কাছে সার্টিফিকেট চায়। এর মধ্যে মানবজমিনে এ বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয়।
আপনি আপনার বাবাকে দাফন করেছেন তারপরও এখন ডিএনএ নমুনা দিতে হচ্ছে এই বিড়ম্বনার পেছনে কারা দায়ী? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই বিড়ম্বনার জন্য গত সরকার দায়ী। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত প্রশাসন এজন্য দায়ী। প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি এবং স্বৈরাচারামূলক আচরণের কারণে আমাকে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী সিআইডিতে যান। তার বাবা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ শনাক্তের জন্য আদালতের নির্দেশে তিনি সিআইডিতে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দেন।
এরও আগে ঢাকা জেলার আদালতের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করে নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, ২০২১ সালে ঢাকার সাভারে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর কি না, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে লাশটি উত্তোলন করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা।
ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহটি হারিছ চৌধুরীর কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাই তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করাসহ তার মরদেহ দাফনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
টিটি/এমআইএইচএস/এএসএম