পাকিস্তানের আদালতগুলোকে সংসদীয় বিষয়ে রায় দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত করে একটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করেছে দেশটির সরকার। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, এখন থেকে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিকে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং তার মেয়াদ তিন বছর নির্ধারিত থাকবে। এছাড়া নতুন একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হবে।
Advertisement
রোববার (২০ অক্টোবর) মধ্যরাতে শুরু হওয়া অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়েছিল বহুল আলোচিত বিলটি। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৩৬ মিনিটে শুরু হওয়া অধিবেশনে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে সোমবার ভোর ৫টায় পাস হয় সংবিধান সংশোধনী বিল।
আরও পড়ুন>>
পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই পাকিস্তানে ‘র’ এর এজেন্ট গ্রেফতার পাকিস্তানে তালেবানের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন নিহতপাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, এই সংশোধনীর লক্ষ্য হলো এমন বিচারিক রায়কে বাধা দেওয়া, যা সংসদীয় কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে। সবাই একমত যে, সংসদের প্রাধান্য নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।
Advertisement
বিলটি পাস হতে পার্লামেন্টে ২২৪ ভোট প্রয়োজন ছিল। শেষ পর্যন্ত ২২৫ ভোটে পাস হয় বিলটি।
এদিন সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ভোট দেয় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং তাদের মিত্র পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। বিরোধী নেতা ইমরান খানের মিত্র হিসেবে পরিচিত একটি ধর্মীয় দলের সমর্থনও পায় সরকার। তবে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সংশোধনীর বিরোধিতা করে।
পিটিআই নেতা ও সংসদে বিরোধী দলের প্রধান ওমর আইয়ুব খান এই সংশোধনীকে ‘স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার শ্বাসরোধ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়।
বিশ্লেষক বিলাল গিলানির মতে বলেন, এই সংশোধনী কিছু ক্ষেত্রে ভারসাম্য তৈরি করবে, বিশেষ করে, বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সক্রিয়তার বিপক্ষে। তবে তিনি সতর্ক করেন, সংশোধনীর একটি খারাপ দিক হলো, এটি এমন একটি বিচার ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, যা সরকারের ইচ্ছার প্রতি বেশি নমনীয়।
Advertisement
এই সংশোধনীটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজি ফায়েজ ইসার অবসর নিতে যাচ্ছেন। পুরোনো নিয়ম অনুযায়ী, তার জায়গায় বসতেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মনসুর আলী শাহ, যিনি ইমরান খানের পক্ষে বেশ কয়েকটি রায় দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এই সংশোধনী পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও বিচারিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত বিচার বিভাগ সরকারের উপর কীভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সূত্র: এএফপিকেএএ/