শিক্ষা

পদ থেকে অব্যাহতি চাইলেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান

এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। সেই ঘোষণা অনুযায়ী- সোমবার সকালে তিনি বোর্ড থেকে তাকে প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন।

Advertisement

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে এ আবেদন জমা দেন তিনি। একই সঙ্গে বোর্ড থেকে প্রত্যাহার করে তাকে নিজের কর্মস্থল বা অন্য কোথাও পদায়নের অনুরোধ করেছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, আমার জন্য তাদের ফল খারাপ হয়েছে; তারা ফেল করেছেন। সেজন্য আমি স্বেচ্ছায় এ পদ থেকে সরে যেতে চাচ্ছি। বোর্ড চেয়ারম্যানের পদ থেকে আমাকে প্রত্যাহার করে অন্য কোথাও দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।’

এর আগে রোববার দিনভর ঢাকাসহ দেশের পাঁচটি শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করা একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে এসএসসি পরীক্ষার শতভাগ নম্বরের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল তৈরি এবং তা পুনরায় প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মধ্যরাত পর্যন্ত বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ ছিলেন। একপর্যায়ে রাতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

Advertisement

হামলার প্রতিবাদে বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন

এদিকে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের হামলা, ভাঙচুর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বোর্ডের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

এসময় তারা ‘ঢাকা বোর্ডে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই রক্তাক্ত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শিক্ষাঙ্গনে হামলা কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’ স্লোগান দেন। তাছাড়া রোববার (২০ অক্টোবর) শিক্ষার্থীরা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করছেন—এমন ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডও তাদের বহন করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন আন্দোলনের মুখে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের দাবি/ আগে সবাইকে পাস, পরে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ঢাকা বোর্ডের ফটকে তালা দিয়ে এইচএসসিতে ফেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফলাফল বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে বোর্ডের ভেতরে ঢুকে পড়েন। অথচ বোর্ডে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র থাকে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কিন্তু তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করার অপচেষ্টা করে। তাদের বাধা দিলে তারা আমাদের অনেকের ওপর হামলা করেছে।

শিক্ষা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর, অরাজকতা সৃষ্টি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরে হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Advertisement

আজও মাঠে ফেল করা শিক্ষার্থীরা, নিরাপত্তা জোরদার

এদিকে, ফল বাতিল করে এইচএসসিতে সবাইকে পাস করানোর দাবিতে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে জড়ো হয়েছেন ফেল করা শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে তারা সচিবালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, ময়মনসিংহ চট্টগ্রাম বোর্ডসহ দেশের সব শিক্ষা বোর্ডে সেনাবাহিনীর সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের দাবি-দাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপদেষ্টা ও সচিব বৈঠক করে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও জানিয়েছে বোর্ডগুলো।

গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলের তথ্যানুযায়ী—এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।

এএএইচ/বিএ/জেআইএম