অর্থনীতি

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেবে সরকার

পুঁজিবাজারে অতীতের দুরবস্থা ও শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার সুবিধা দেবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্য খাতগুলোর মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই এসব কোম্পানির আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে।

রোববার (২০ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের নামে এ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বাজারে লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফ্লোরপ্রাইস আরোপ, সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমায় নানা কৃত্রিম ব্যবস্থায় বাজারের এ অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

টানা দরপতনে হাহাকার বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের১৫ বছরে ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে লোপাট ৯২২৬১ কোটি টাকা: সিপিডি

‘কিন্তু এখন ওই কৃত্রিম চেষ্টা না থাকায় ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা অনিয়ম, দুর্নীতি, কারসাজির অনিবার্য পরিণতি আগের চেয়েও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও আস্থা ফেরাতে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিএসইসি গঠিত এ টাস্কফোর্সের ১৭টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের সংস্কার, রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, পুঁজিবাজারে পণ্য ও বাজার উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে কর্মরত পেশাজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার, বাজারের বৈচিত্র্য আনতে নতুন পণ্য আনা, সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারের গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কার ইত্যাদি সংস্কারমূলক কার্যক্রমে বিএসইসি কাজ করছে- বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

এতে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স কার্যক্রমের বাইরেও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারে পথনকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে বাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে নানা সুপারিশ উঠে এসেছে। বাজারের স্বার্থে যেসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য, যাচাই-বাছাইয়ের পর সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে সুফল মিলবে মর্মে আশাবাদী সরকার। পুঁজিবাজার তদারকি ও কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সার্ভিলেন্স সিস্টেমের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে বিএসইসি।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর অংশ হিসেবে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন, তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন, আইপিও অনুমোদন ও তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দ্রুত সম্পাদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে কমিশন।

বিভিন্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি একদিকে যেমন দেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে, অন্যদিকে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থায়নের ফলে এসব বিভিন্ন খাতের অধিকতর বিকাশের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়ন ও উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার সুযোগ তৈরি হবে- বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এক অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি ১২.৭৯ বিলিয়ন ডলারমন্দা বাজারে ‘পচা শেয়ারের’ দাপট

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর সংস্কারের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো যেন যৌক্তিক মূল্য পায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা বহুজাতিক কোম্পানিসহ ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে সহায়ক হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের পুঁজিবাজারের আকার বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে করপোরেট অনুশীলন করতে হবে। নিয়মিতভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করতে হবে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। সরকার আশাবাদী যে সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে গভীরতা বাড়বে ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী হবে।

এসব পদক্ষেপের ফলে বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা দ্রুত সুফল পাবেন বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এমএএস/এমকেআর/জেআইএম