নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করোনাকালে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য বরাদ্দ আসা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নামে-বেনামে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ করছেন টাকা না পাওয়া কর্মীরা। এনিয়ে একাধিক অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিটি করপোরেশন।
Advertisement
সূত্র বলছে, গত দেড় মাস আগে করোনাকালে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের বরাদ্দ আসা অর্থের হিসাবের স্বচ্ছতা এবং পূর্ণ মজুরি দাবি করেন। শুরুর দিকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে সিটি করপোরেশনের মেডিকেল কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা আলীকে পূর্ণ হিসাব প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তার দেওয়া হিসেবে উঠে এসেছে গড়মিলের নানান চিত্র।
এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রায় ৪০ কর্মী। তাদের কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এরমধ্যে একেকজন কর্মী একেক পরিমাণ মজুরি পেয়েছেন।
স্বেচ্ছাসেবী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৭৫৪ দিন কাজ করেছি। আমাকে রশিদসহ প্রদান করা হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। রশিদ ছাড়া একটি রেজিস্টার খাতায় সই নিয়ে দেওয়া হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। আমার কর্মদিবস অনুযায়ী আমি দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাপ্য। কিন্তু আমি পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি হিসাবরক্ষণ বিভাগে দেওয়া খাতা চেক করে দেখতে পাই আমার স্বাক্ষর নকল করে তুলে নেওয়া হয়েছে ছয় হাজার ৭৫০ টাকা। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
Advertisement
আরেক স্বেচ্ছাসেবী নুসরাত জাহান সুনাম বলেন, আমি ৫৭৫ দিন কাজ করেছি। আমাকে রশিদসহ ২৫০০ এবং রশিদ ছাড়া একটি রেজিস্টার খাতায় সই নিয়ে ২৫ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি মোট ২৭ হাজার ৭০০ টাকা পেয়েছি। কর্মদিবস অনুযায়ী আমি দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা পাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য কত টাকা বরাদ্দ এসেছে সেটা জানা। কিন্তু সেই তথ্য দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে মেডিকেল কর্মকর্তা মোস্তফা আলী। আমাদের জন্য যদি বরাদ্দ না আসে তাহলে আমরা টাকা নিব না। কিন্তু বরাদ্দ দিয়েছে কত টাকা তা আমরা স্পষ্ট জানতে চাই। নথি যাচাই করে দেখতে পেয়েছি আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। যে বিষয়ে আমি অবগত নই।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পাওয়া নথিপত্রে গড়মিলের বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট পাওয়া গেছে। টাকা বণ্টন শিটের কয়েকটি নাম ও পাতা একই। যেগুলো একাধিকবার ব্যবহার করে একাধিক ভাউচার বানানো হয়েছে। ২০২২ সালের ২৮ মার্চ একদিনে এক কোটি টিকা কার্যক্রমের নথি যাচাই করে দেখা যায় শিটের ৮৩ নম্বর ও এবং ৯১ নম্বর ভাউচার হুবহু মিল। একইভাবে, ৮৬ ও ৯০ নম্বর শিট, ৬৬ ও ৯৬ নম্বর শিট, ৬১ ও ৯৭ নম্বর শিট, ৬৪ ও ৯৮ নম্বর শিটের হুবহু মিল রয়েছে। যেখানে অর্থ গ্রহীতাদের নাম, স্বাক্ষর ও অর্থ পরিমাণ একই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।
Advertisement
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে অবগত রয়েছি। ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/আরএইচ/জিকেএস