বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতিতে সংস্কার আনার পক্ষে প্রায় সব ছাত্র সংগঠন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক হিসেবে পরিচিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ছাত্র রাজনীতির সংস্কার চান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে পড়াশোনা এখনো চলমান এমন শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি করার দিকেও জোর দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।
Advertisement
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের হল শাখাগুলোর কমিটি নিয়ে বেশ গুঞ্জন উঠেছে। যেখানে একেবারেই নতুন কর্মীদের দিয়ে হল কমিটি করার বেশ জোরেশোরে চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে কর্মীদের মধ্যে সদস্য ফরম বিতরণ এবং তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে।
দলটির ঢাবি শাখার নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, ঢাবি শাখায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন (১৪-১৫, ১৫-১৬, ১৬-১৭ ও ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থীরা)। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন করে যারা সংগঠনে এসেছেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আছেন কিন্তু অনেকেই এখন পর্যন্ত কোনো পদে নেই অথবা পদে থাকলেও একটি হল শাখা চালানোর মতো পরিপক্ব না (১৯-২০, ২০-২১, ২১-২২ সেশন)। তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই চার সেশনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ৪টি সেশন (১৪-১৫, ১৫-১৬, ১৬-১৭ ও ১৭-১৮) এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঢাবিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঝান্ডা ধারণ করেছি যখন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নাম মুখে নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এমনকি আমরা এও জানতাম না যে কবে নাগাদ এই ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটবে। সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে সংগঠনের আদর্শ ধারণ করার কারণে আমরা প্রত্যেকে জেল-জুলুম, সীমাহীন নিপীড়ন, নির্যাতন ও দীর্ঘকালীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমরা হলে থাকতে পারিনি, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণেও বাধার সম্মুখীন হয়েছি। অসীম ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিয়ে সংগঠনের প্রতিটি নির্দেশ ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।
Advertisement
তারা বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে ৫ জুন থেকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সচেতনতার সঙ্গে আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি। দেশ ও দলের ৩টি ক্রাইসিস মোমেন্টেও (২০১৫ সালের ৯৩ দিনের আন্দোলন, ২০১৮ সালের আন্দোলন, ২৮ অক্টোবর ও ৭ জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম) এই সেশনগুলোর নেতৃবৃন্দই জীবন বাজি রেখে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে চার সেশনের নেতাকর্মীরা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃবৃন্দ হল কমিটি করতে উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন মারফতে আমরা জানতে পারি যে, একটি নির্দিষ্ট সেশনকে কেন্দ্র করে হল কমিটির ক্রাইটেরিয়া ধরা হয়েছে। এই হল কমিটিতে যাদের পদায়ন করা হচ্ছে তাদের ৮০ শতাংশই একদম নতুন, যাদের সঙ্গে আমরা যে অনুভূতির কথা শুরুতেই উল্লেখ করেছি এরা পরিচিত নয়। এটা সংগঠনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অযৈাক্তিক। গত সোহেল-আরিফ কমিটিতে এই ৪টি সেশন ছাড়া সবাইকে পদায়ন করা হয়। ওই কমিটিতে আমাদের হল কমিটিতে রাখবে বলে পরবর্তীতে আর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতেও রাখেনি।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দুই নেতাকে অব্যাহতিপরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা, থানায় সোপর্দনেতাকর্মীরা জানান, আমরা এই ৪টি সেশন এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করে আমাদের অবদান, ত্যাগ ও দাবি উত্থাপন করি। তারা আমাদের কথা শুনে হল কমিটির ক্ষেত্রে ‘সাধারণ ও অসাধারণ’- এর একটি টার্ম ব্যবহার করেছেন। তাদের কথা মোতাবেক আমরা যদি হল কমিটিতে অসাধারণ হই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির ক্ষেত্রে তারাও অসাধারণ।
এই চার সেশনের নেতাকর্মীরা কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো-সংগঠনের স্বার্থে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড মেইনটেইন করে এই চার সেশনকে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও একটি আহ্বায়ক হল কমিটি দিতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও প্রথমে একটি জুনিয়র কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে হল কমিটিতে জুনিয়রদেরকে মূল্যয়ন করা হোক।
Advertisement
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনও ফোন রিসিভ করেননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা আছেন তাদের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এখনো কোন সেশন থাকবে বা থাকবে না সেটা নির্দিষ্ট করে সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটি শিক্ষার্থীদের জন্যে অধিক কল্যাণকর, তেমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেটি শিক্ষার্থীদের ভালো বিবেচনা করেই নেওয়া হবে। যারা ছাত্ররাজনীতি বেশি সময় ধরে করেছেন, তাদের নেতা হওয়ার বিষয়ে সংগঠনের ওপরে এক ধরনের অধিকারও থাকে। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তনের একটা আবেদনও আছে, সেটিও মনে রাখতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে একটা ভালো সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশাবাদী।
এমএইচএ/কেএসআর/জেআইএম