গভীর সমুদ্রের ভেতরে আছে অসংখ্য প্রাণের অস্তিত্ব। শৈবাল থেকে শুরু করে নানান আছ, প্রাণী। যার অধিকাংশই আমাদের এখনো অজানা। তবে এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে বা সামনে এসেছে তাও কম নয়। এমন অনেক প্রাণী লুকিয়ে আছে যাদের সম্পর্কে আমরা খুব অল্প পরিমাণেই জানি। সেই তালিকার শীর্ষে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘গবলিন হাঙর’।
Advertisement
গবলিন হাঙরের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মিতসুকুরিনা ওস্টোনি’। এই বিরল ও গভীর সমুদ্রের হাঙরটির নামকরণ করা হয়েছে ইংরেজি বন্যপ্রাণী সংগ্রাহক অ্যালান ওস্টনের নামে। অদ্ভুত চেহারা, বিশেষ করে লম্বা নাক, ধারালো দাঁতগুলো এটিকে সাগরের এক রহস্যময় শিকারী করে তুলেছে।
গবলিন হাঙরকে জীবন্ত জীবাশ্মও বলা হয়। কারণ এদের উদ্ভব প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গবলিন হাঙরের সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর লম্বা, চ্যাপ্টা নাক যা অত্যন্ত সংবেদনশীল। এর মাধ্যমে হাঙরটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ শনাক্ত করে, যা তাকে গভীর অন্ধকার সমুদ্রের তলদেশে শিকার ধরতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন
Advertisement
এদের দাঁতগুলো দীর্ঘ এবং তীক্ষ্ণ, যা ছোট মাছ এবং স্কুইডের মতো শিকার সহজেই আটকাতে পারে। এই হাঙরের গড় দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১৩ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, তবে এর চেহারার অদ্ভুত গঠন এটিকে আরও ভয়ংকর দেখায়।
গবলিন হাঙর মূলত গভীর সমুদ্রের প্রাণী। এদেরকে ১০০ থেকে ১৩০০ মিটার গভীরতায় পাওয়া যায়। জাপানের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় এদেরকে ‘তেঙ্গুজামে’ বলা হয়। এটি জাপানি শব্দ, যার অর্থ গবলিন হাঙর। তবে শুধু জাপানের সমুদ্র এলাকা নয়, বিভিন্ন স্থানের গভীর সমুদ্রে এদের দেখা পাওয়া গেছে।
গবলিন হাঙরের শিকার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এদের মুখ স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরের সঙ্গে মিশে থাকে, কিন্তু শিকার করার সময় এরা মুখ দ্রুত সামনের দিকে ছুড়ে দেয়। এর ধারালো দাঁত এবং দীর্ঘ নাক শিকার ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গভীর অন্ধকারে এদের ইলেকট্রোসেন্সরি সিস্টেম শিকার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
গবলিন হাঙর খুবই বিরল প্রজাতি হওয়ায় এদের নিয়ে গবেষণা করা কঠিন। এদেরকে বিপন্ন বা হুমকির সম্মুখীন না হলেও এরা গভীর সমুদ্রের বাসিন্দা হওয়ায় এদের প্রকৃত সংখ্যা বা বাসস্থান সম্পর্কে তেমন তথ্য জানা যায়নি। গভীর সমুদ্রের নানা রহস্যময় প্রজাতির মতো গবলিন হাঙরও মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।
Advertisement
গবলিন হাঙর গভীর সমুদ্রের একটি রহস্যময় এবং বিরল প্রাণী। এর অদ্ভুত আকৃতি, শিকার ধরার কৌশল এবং গভীর সমুদ্রের জীবনযাপন বিজ্ঞানীদের কাছে বিস্ময়ের পাশাপাশি এক বিশাল গবেষণার ক্ষেত্র।
আরও পড়ুন
যে দেশে পোকামাকড়, সাপ কিছুই নেই সমুদ্রের প্রাচীন শিকারি ফ্রিল্ড শার্কসূত্র: স্মিথসোনিয়ান ওশান পোর্টাল, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড
কেএসকে/এমএস