জাতীয়

আওয়ামী লীগের আবার ফিরে আসা একেবারেই অসম্ভব: বদরুদ্দীন উমর

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সব সংগঠন ধসে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে যে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে, সেটা একেবারেই অসম্ভব। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ যেভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগও সেভাবে শেষ হয়ে গেছে।’

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই, জনগণের সরকার-সংবিধান-রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বায়ান্ন সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত অভ্যুত্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক, গভীর ও আক্রমণাত্মক ছিল। গত সাড়ে ১৫ বছরে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) জনগণের ওপর এমন অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, যার কোনো পূর্বদৃষ্টান্ত নেই। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু বিক্ষোভের সুযোগ ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে সেই বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

Advertisement

অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে আগুন দেওয়া নিয়েও কথা বলেন বদরুদ্দীন উমর।

তিনি বলেন, ‘এর ফলে বিক্ষোভ হয়েছে এবং এই বিক্ষোভ যে কেবল শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হয়েছে তা নয়, এটি শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও হয়েছে।’

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের গুলিস্তান মোড়ে শেখ হাসিনার বিচার করা উচিত: দুদু

৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ সম্প্রতি যেসব দিবস বাতিল করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়েছে বলেও মনে করেন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট কেন ছুটি থাকবে? ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, আব্রাহাম লিংকনকে খুন করেছে, ছুটি আছে? এই দিবসে কর্মসূচি করতে পারে, কিন্তু জাতীয় দিবস হিসেবে ছুটি কেন?’

Advertisement

বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, ‘এ দেশের জনগণ দুবার তার (মুজিব) বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। একবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, আরেকবার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যার পর একজন লোকও তার পক্ষে রাস্তায় নামেনি। স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরে শেখ মুজিব কী করলেন, যার জন্য মানুষ এটা করল, তা হিসাব করতে হবে।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতন এখন পর্যন্ত ভারত হজম করতে পারেনি মন্তব্য করে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘এর কারণ ভারতের সঙ্গে তার সব প্রতিবেশীর সম্পর্ক খারাপ। শুধু বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব ছিল। ভারত এ দেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করত। সেই আশ্রিত রাজ্য হাত ফঁসকে যাওয়া তাদের হজম হচ্ছে না।’

বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা দরকার ভারত তা করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত অস্বস্তিতে আছে। তারা চেষ্টা করেছিল হাসিনাকে অন্য কোথাও পাঠানোর জন্য। অন্য দেশ আশ্রয় না দেওয়ায় ভারতেই রাখতে বাধ্য হলো।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উড়ে এসে জুড়ে বসেনি বলে মনে করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, ‘হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হওয়ার পর একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এই শূন্যতা পূরণ করা দরকার ছিল। ছাত্র ও অন্যরা মিলে যদি এই সরকার দাঁড় না করাতো, একমাত্র বিকল্প ছিল সামরিক সরকার। যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে এখন বলছেন, তারা কি বলবেন এর চেয়ে সামরিক সরকার ভালো ছিল?’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, দলটির নেতা সজীব রায়, ভুলন ভৌমিক, কাজী ইকবাল, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।

কেএসআর/এমএস