অর্থনীতি

এক সপ্তাহে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমলো ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি

দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন চলছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে মূল্যসূচকের বড় পতনের পাশাপাশি কমেছে বাজার মূলধন। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক কমেছে দেড়শ পয়েন্টের বেশি। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি শেয়ারবাজারের দশম সপ্তাহ। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আরও নয় সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। সবমিলিয়ে এ সরকারের সময়ে লেনদেন হওয়া ১০ সপ্তাহের মধ্যে নয় সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে মূল্য সূচক কমেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। যদিও চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। এরপর পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সপ্তাহেও অব্যাহত থাকে দরপতনের ধারা।

এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহজুড়েও শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৪টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৫টির। এছাড়া ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

Advertisement

ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে।

আরও পড়ুন

শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন চলছেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রতিপক্ষের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ

দাম কমার তালিকায় সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৬৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। তার আগের আট সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫০২ পয়েন্ট। আন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ১০ সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৬৬৬ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৫৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ।

Advertisement

এছাড়া ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ২৬ শতাংশ।

সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেকনো ড্রাগস।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

এমএএস/কেএসআর/এমএস