ইতিহাস জানাচ্ছে, আজ থেকে ১ বছর ২দিন আগে ২০২৩ সালের ১৩ অক্টোবর ভারতের চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের ম্যাচে বাংলাদেশের দ্বাদশ ব্যক্তি নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছিলেন টাইগার হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
Advertisement
বছর পূর্ণ না হতেই সে অন্যায়ের শাস্তি পেলেন হাথুরুসিংহে। তাকে কোচের পদ থেকে সাসপেন্ডের পাশাপাশি শোকজ করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সে সঙ্গে বরখাস্তের বিষয়টাও নিশ্চিত করে দিলেন। শুধু তাই নয়, পরিবর্তিত কোচও নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে বিসিবি।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ আজ মঙ্গলবার বিকেলে হাথুরুর শাস্তি ও নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বলেন, ‘এখন আইসিসি খুব স্ট্রংলি রেসিজম, অ্যাবিউজ এগুলো হ্যান্ডেল করে। যদি অ্যাসল্টের মতো কিছু হয়, তাহলে আরও সিরিয়াসলি হ্যান্ডেল করবে।’
বিসিবি প্রধান বোঝানোর চেষ্টা করেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হুট করে একটা ঘটনা ঘটতেই পারে; কিন্তু জাতীয় দলের কোন ক্রিকেটারকে একজন কোচ কোনভাবেই লাঞ্চিত করতে পারেন না।
Advertisement
নাসুম আহমেদের নাম না ধরে ফারুক আহমেদ বলে ওঠেন, আপনি জানেন এটা পার্টিকুলার ওই ছেলের জন্য খুবই বাজে একটা জিনিস। মনে হয়েছে যে এটা আসলে কিছু একটা হলে ভালো হয়। খুব ভালোভাবে বোঝেন, সে ন্যাশন্যাল টিমের প্লেয়ার।’ তিনি আরও যোগ করেন,‘উই আর হিউম্যান বিং। আমি ডিফেন্ড করতে চাচ্ছি না। হিট অ্যাট দ্য মোমেন্ট একটা জিনিস হতে পারে। বাট ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট আসলে কোনো পর্যায়ে কোনোভাবে একটা ন্যাশন্যাল প্লেয়ারকে আপনি করতে পারেন না।’
হাথুরুকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে, সেটা ওই অন্যায় আচরণের শাস্তি বলেই অভিহিত করেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। ‘এটার শাস্তি ওই আরকি। যেটা হচ্ছে আরকি এখন (বরখাস্ত ও শোকজ নোটিশ)। ওইটাই হওয়া উচিত ছিল আজ থেকে আগে যেটা হলো।’
বিসিবি প্রধানের এমন বক্তব্যর পর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একজন ক্রিকেটারকে লাঞ্চিত করার অনিবার্য শাস্তিই পেলেন হাথুরু; কিন্তু এক বছর পরে কেন? কি কারণে এতদিন পর তার বিপক্ষে অ্যাকশন নিল বিসিবি?
নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে যে বোর্ড ছিল, সেই বোর্ডতো গত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছিল। তবে কি ওই কমিটির রিপোর্টে হাথুরুর হাতে নাসুমের লাঞ্চিত হবার ঘটনার উল্লেখ নেই? তদন্ত কমিটি তথা বিসিবি কি তবে হাথুরুকে বাঁচাতেই নাসুমের লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা বেমালুম চেপে গেছেন?
Advertisement
নাকি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে হেড কোচ হাথুরুসিংহের হাতে নাসুমের লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনার উল্লেখ থাকলেও বিসিবি হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে কোনরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সাহস দেখায়নি। উল্টো পুরো ঘটনা পাশ কাটিয়ে গেছে?
বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, বিসিবি পরিচালন এনায়েত হোসেন সিরাজের নেতৃত্বাধীন মাহবুব আনাম ও আকরাম খানকে দিয়ে গড়া তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি ঠিকই তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিল।
আর তাই বিসিবি প্রধানের মুখে এমন কথা, ‘আপনাদের বলেছি, আপনারা খুব জোর দিয়েছিলেন রিপোর্টটা বের হয় না কেন? আমি ওই রিপোর্ট নিয়ে অনেক কাজ করেছি। আপনি শুনেছেন, আমি ভিক্টিম প্লেয়ারে সঙ্গে টেলিফোন, ফিজিক্যালি মিট করেছি। কথা বলেছি। রিপোর্ট আমি পড়েছি। রিপোর্টে সবকিছু আছে।’
ফারুক আহমেদের কথা সত্য ধরলে বলতে হবে, নাজমুল হাসান পাপন সহ সে সময়ের বোর্ড কর্তারা ওই রিপোর্ট দেখেও তা প্রকাশ করেননি। চেপে গেছেন। এমনকি হাথুরুর বিপক্ষে কোনরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। কিংবা নেয়ার সাহস দেখাননি। সেটা কিন্তু বড় ধরনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এমনকি অপরাধও। যার দায় নাজমুল হাসান পাপন এন্ড কোংকে নিতেই হবে।
এআরবি/আইএইচএস