তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুটি। এক, জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে লাঞ্চিত করা। দুই শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিসিবির সাথে করা চুক্তির বরখেলাপ। মূলত এই দুটি কারণেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচ থেকে বরখাস্ত করেছে বিসিবি। পাশাপাশি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার বিকেলে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ। তবে ওই ইস্যুতে অন্তত তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একবারও হাথুরুর হাতে লাঞ্চিত ওই ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করেননি ফারুক।
একবারের জন্যও বলেননি, ‘অমুক’ ক্রিকেটারকে লাঞ্চিত করেছেন হাথুরু। এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে বিসিবি সভাপতির এমন ঘোষণার পর অনেকের মনেই কৌতুহলি প্রশ্ন, কে সেই লাঞ্চিত ক্রিকেটার?
সেই কৌতুহলীদের জন্য জবাব, হাথুরুর কাছে লাঞ্চিত সেই ক্রিকেটার হলেন নাসুম আহমেদ। যাকে ২০২৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় হাথুরু শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন।
Advertisement
দিনটি ছিল গত বছরের ১৩ অক্টোবর। ভারতের চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের সময়ের ঘটনা ছিল সেটা। ওই ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর কাভার করতে যাওয়া একাধিক বাংলাদেশী সাংবাদিকের ভাষ্য, ওই ম্যাচে নাসুম একাদশে ছিলেন না। তিনি ছিলেন দ্বাদশ কিংবা ত্রয়োদশ খেলোয়াড়।
ম্যাচের বিভিন্ন সময় সহযোগীদের পানি পান করানো, ঘাম মোছার জন্য টাওয়েল নিয়ে কিংবা গ্লাভস বদলের কাজে মাঝে-মধ্যেই বাংলাদেশের দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ ব্যক্তিকে মাঠে পাঠানো হচ্ছিল। কখনো কখনো ওই পানি পান করানো, গ্লাভস বদল কিংবা তোয়ালে দিয়ে ঘাম মোছার অজুহাতে মাঠে ঢোকা ওই অতিরিক্ত সদস্যদের মাধ্যমে মাঠে বিভিন্ন বার্তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাঠাচ্ছিলেন বাংলাদেশ কোচ হাথুরুসিংহে।
সেই কাজে এক পর্যায়ে নাসুম আহমেদকে কোন অজুহাতে মাঠে ঢুকে ক্রিকেটারদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে বলেন বাংলাদেশের কোচ হাথুরুসিংহে। নাসুম আহমেদ হয় তা শোনেননি, কিংবা বোঝেননি। তার মাঠে যেতে বিলম্ব হয়। এতে করে হাথুরু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নাসুমের ঘাড়ে ও কাঁধে আঘাত করেন।
এই আঘাতের ধরন নিয়ে অবশ্য দুই রকম ভাষ্য আছে। এক পক্ষের দাবি, নাসুমের মাঠে ঢুকতে দেরি হওয়ায় হাথুরুর বার্তা মাঠে পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়। তাতে করে মেজাজ বিগড়ে যায় বাংলাদেশ কোচের। তিনি সপাটে নাসুমের ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে মাঠে যেতে বলেন এবং কান ও ঘাড়ের আশপাশে হাত দিয়ে আঘাত করেন। আবার অন্য পক্ষের বক্তব্য, হাথুরু নাসুমকে সেভাবে আঘাত হানেননি। শুধু ঘাড় ও কাঁধের ওখানে গুঁতো দিয়েছিলেন।
Advertisement
তিনি কোচ বা প্রশিক্ষক হিসেবে তার অধীনস্ত ক্রিকেটারদের মুখে যা খুশি বলতে পারেন, কারো ভুল, ত্রুটি আর ব্যর্থতা ও না পারা নিয়ে কঠিন ও তীর্যক ভাষায় সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু গায়ের হাত তোলার অধিকার নেই কোন কোচের।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও আজ সে কথাই বলেছেন। তার বক্তব্য, ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, কোনো কোচ তো কোনো ক্রিকেটারের গায়ে হাত তুলতে পারেন না। এটা গর্হিত অন্যায়। কাজেই হাথুরু সেই অন্যায়ের শাস্তিই পেলেন।
এআরবি/আইএইচএস