পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য নয়, সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
তারা বলেন, এখন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। পুলিশ, শ্রমিক নেতা কিংবা দলীয় কোনো পারপাসে চাঁদাবাজি নেই। ট্রাক ভাড়াও আগের চেয়ে কমেছে। তারপরও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? এটা আসলে সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সম্মেলন কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ সম্পর্কে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা।
আলোচনা সভায় বিআরটিএ কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ও বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারাও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন।
Advertisement
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত ও কার্যকরী সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বক্স দুদু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান।
তারা বলেন, ঢাকায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিআরটিএর বৈঠক ছিল। সেখানে আমরা বলেছি, বিগত সরকারের আমলে বড় বড় যেসব সিন্ডিকেট ছিল, তারা এখনো রয়েছে। আর তাদের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম দিনকে দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেছেন।
আরও পড়ুন
‘কাঁচা মরিচে ঠাডা পড়ছে, এক লাফে দাম ৬০০’ সয়াবিন ও পাম তেলের শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবজানতে চাইলে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান বলেন, সড়কে নিত্যপণ্যের পরিবহন থেকে এখন চাঁদাবাজি নেই। পুলিশও কোথাও গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নিচ্ছে না। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক ধরনের সিন্ডিকেটের কারণেই এই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাক ভাড়াও আগের চেয়ে কমেছে। বিগত সরকারের আমলে বড় বড় যেসব সিন্ডিকেট দাম বৃদ্ধি করছে, এখনো তারা সক্রিয়। এখানে পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরও করণীয় কিছু নেই।
Advertisement
পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে, সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী পলাতক। তাহলে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কীভাবে চলছে? এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ূন কবির খান বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শাজাহান খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী সংগঠনের ব্যানারে টার্নিমালে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম করতেন। সংগঠনের মূল দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি না থাকায় পরবর্তীতে ৮টি বিভাগের ও ঢাকার সব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মতিক্রমে এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
হুমায়ূন কবির খান আরও বলেন, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কল্যাণ তহবিলের কথা বলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের শ্রমিকদের কাছ থেকে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। সংগঠনের অ্যাকাউন্টে না নিয়ে এসব টাকা তিনি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে নেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সায়েদাবাদ টার্মিনালের শ্রমিকরা এসব টাকার জন্য মিছিল করেছেন। কিন্তু ওসমান আলীর হদিস মেলেনি। এতকিছুর পরও ওসমান আলী আত্মগোপনে থেকে পরিবহন খাতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছ থেকে টার্মিনাল কিংবা ফেরিতে যে পরিমাণ টাকা নেওয়ার কথা ছিল, এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এবং ফেরি ঘাট ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা মনগড়া টাকা আদায় করছেন। সবজির গাড়ি থেকে ইজারাদার অধিক টাকা নিচ্ছেন। এতে হয়তো সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিষয়টি বিআরটিএ, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত। আবার পৌরসভার নামেও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
টিটি/কেএসআর/এমএস