বাংলাদেশ থেকে বিদায়টা ভালো হলো না চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। প্রথম মেয়াদে একটি ই-মেইল লিখেই চাকরি ছেড়ে গিয়েছিলেন। সেই হাথুরুকে বলতে গেলে হাতেপায়ে ধরে দ্বিতীয় মেয়াদে কোচ বানিয়ে নিয়ে আসেন তখনকার বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন।
Advertisement
হাথুরুর অধীনে ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে সম্প্রতি টেস্ট সিরিজ জয়ের পর মনে হচ্ছিল, এ যাত্রায় বেঁচে যেতে পারেন হাথুরু। কিন্তু ভারত সফরে আবারও যাচ্ছেতাই। দুই টেস্টের সিরিজে বাজেভাবে নাকাল হওয়ার পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও লড়তে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
ভারত সফর শেষে রোববার রাতে দলের সঙ্গে ঢাকায় ফেরেন হাথুরু। তবে ঢাকায় আর থাকা হচ্ছে না তার। আজ (মঙ্গলবার) পেয়েছেন বরখাস্ত হওয়ার খবর। ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত হাথুরুর সঙ্গে চুক্তি ছিল বিসিবির। তবে আগেভাগেই তাকে বিদায় করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কেমন ছিল হাথুরুসিংহের দুই অধ্যায়?
২০১৪ সালের মে মাসে প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাথুরু। ছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত।
Advertisement
হাথুরুর প্রথম মেয়াদে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায় বাংলাদেশ দল। ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলে কোয়ার্টার ফাইনাল। এরপর ওয়ানডে সিরিজ জেতে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট জয় কিংবা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটে জয়-হাথুরুকে তুলে দেয় অন্য উচ্চতায়।
সবমিলিয়ে প্রথম মেয়াদে হাথুরুর অধীনে ২১ টেস্টে ৬ জয়, ১১ হার এবং ৪ ড্র পায় বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ৫১ ম্যাচে ২৫ জয়, ২৩ হার এবং ৩টি পরিত্যক্ত হয়। টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচে ১০ জয় এবং ১৯ হার ও ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
তবে দুর্দান্ত সাফল্যের পরও হুট করে বাংলাদেশ দলের চাকরি ছেড়ে দেন হাথুরু এবং সেটা শুধু একটা ই-মেইলের মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে বাংলাদেশকে আর তোয়াক্কা করেননি হাথুরু।
সেই হাথুরুকেই দ্বিতীয় মেয়াদে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিয়োগ দেয় বিসিবি। এবার তার অধীনে ১০টি টেস্ট, ৩৫টি ওয়ানডে ও ৩৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। টেস্টে ৫টি করে জয় এবং হার। আছে পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
Advertisement
তবে ওয়ানডেতে ফল ছিল হতাশাজনক। ৩৫ ম্যাচে ১৩টি জয়, হার ১৯টি, ৩ ম্যাচে ফল হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ ম্যাচের ১৯টিতে জয় পায় বাংলাদেশ, হারে ১৫টিতে, একটিতে ফল হয়নি।
সবশেষ ভারত সফরে দুই টেস্টে চরমভাবে পর্যদুস্ত হয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও একই অবস্থা। ভারত টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২৯৭) রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে।
দলের সাফল্যের বিচারে হাথুরু বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কোচ। তবে মাঠের ফল নয়, মাঠের বাইরে অনেক কারণে সমালোচনার শিকার হন এই কোচ। সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি এবং অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও হাথুরুকে বরখাস্ত করার পেছনে এই অসদাচরণের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এমনকি চাকরি হারানোর সঙ্গে শোকজ নোটিশও পেয়েছেন লঙ্কান এই কোচ।
এমএমআর/এমএস