শিক্ষা

নটর ডেমের শিক্ষার্থীদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে। ফল প্রকাশের পর আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন রাজধানীর নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠান থেকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাস যেন রূপ নেয় বাঁধভাঙা জোয়ারে। শিক্ষার্থীদের আনন্দে যোগ দেন অভিভাবক ও শিক্ষকরাও। শিক্ষার্থীদের বিজয়ের ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে ক্যামেরাবন্দী হওয়ার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

Advertisement

অনেক শিক্ষার্থী আগেই ফল (ইন্টারনেটে) জানলেও সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে আসেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে তারা দেখা করে ফলাফল জানাচ্ছেন ও দোয়া নিচ্ছেন।

এদিন বেলা ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, বাধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। ফলাফল ঘোষণার পর হর্ষধ্বনি দিয়ে আনন্দ উদযাপন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সহপাঠীরা একে অন্যকে নিজের ফলাফল জানাচ্ছেন, নাচ-গান আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন।

এবারের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানেরা শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়নে পড়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। শিক্ষকরাও ছিলেন আন্তরিক। সব মিলে উভয়ের পরিশ্রমে ভালো ফলাফল সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

নিজ সন্তানের সঙ্গে আব্দুল্লাহ নামে এক অভিভাবক এসেছেন নটরডেম ক্যাম্পাসে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জে নিজের বাসা থাকলেও ছেলের লেখাপড়ার সুবিধার্থে কলেজের কাছাকাছি (গুপিবাগ) বাসা ভাড়া নিয়ে আছি। আমি চেয়েছিলাম ছেলেরা মানুষ হোক। আজ পরীক্ষার রেজাল্ট অনলাইনে আগেই পেয়েছিলাম। তার (ছেলে) বন্ধুদের ফলাফলও ভালো। তাই সবার সঙ্গে দেখা করতে এলাম, তাদের আনন্দও দেখতে এলাম।

জিপিএ-৫ পাওয়া মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষদের। তারা নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করেছেন, পড়িয়েছেন। আমার মা-বাবাকে সন্তুষ্ট করতে পেরে ভালো লাগছে। এবার প্রথম লক্ষ্য মেডিকেলে পড়াশোনা।

জিপিএ-৫ পাওয়া অন্য শিক্ষার্থী শরফুল জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষক এবং মা-বাবার আদর-ভালোবাসার ফল এটি। এখন লক্ষ্য স্বপ্ন পূরণ। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য আমাদের কলেজ আমাদের উৎসাহিত করেছে। বাইরের দেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে, দেখি পরবর্তিতে কি হয়। এর পর পরই ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যান মাহমুদ-শরফুলরা।

এদিন বেলা ১১টায় সব বোর্ডের ওয়েবসাইটে একযোগে পৃথকভাবে ফল প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফল দেখতে পারছেন। পাশাপাশি মোবাইলফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। তাছাড়া নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ফলাফল টাঙিয়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

এদিকে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। যেখানে থাকছে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা। সরকারপ্রধান বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাও ফলাফল প্রকাশের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। সব প্রথা বা রীতি ভেঙে স্ব স্ব বোর্ড চেয়ারম্যানরা ফল ঘোষণা করবেন।

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী-৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

সূচি অনুযায়ী-মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়। এতে কারও পাঁচ বিষয়, আবার কারও ছয় বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। সেগুলোতে এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে। আর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর খাতা মূল্যায়ন করে নম্বর ও গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ হবে।

ইএআর/এমআইএইচএস/জেআইএম