রাজনীতি

তামিমের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত, এর পেছনে দখলদারত্ব ছিল না

সম্প্রতি বেসরকারি দীপ্ত টেলিভিশনের কর্মকর্তা হত্যার যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা কোনো দখলদারির বিষয় ছিল না। বরং পুরো বিষয়টিই ছিল আমার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

Advertisement

রোববার (১৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে তার এই বিবৃতি দেন দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি আমি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আমি বর্তমানে প্লিজেন্ট প্রপার্টি নামের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত আবাসন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবেও কর্মরত। সব নিয়মনীতি মেনেই ২০ বছর ধরে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। অতীতে কখনোই কোনো আবাসন প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) আমার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নির্মিত হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রকল্পে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে চরম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ফ্ল্যাটের অর্ধেকাংশের মালিকানা নিয়ে তিন বছর ধরে চলা অমীমাংসিত ঘটনার সূত্র ধরে তানজিল ইসলাম তামিম নামের একজন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মৃত্যু বরণ করে।

Advertisement

হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রজেক্টে যেই জমির ওপর আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয় ওই জমির মালিক মোট তিনজন। আমার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমির মালিকদের চুক্তির পর যথানিয়মে ভবন নির্মাণ করে তিন বছর আগেই জমির মালিক ও ফ্ল্যাট ক্রেতাদের সব ফ্লাট হস্তান্তর করে দেওয়া হয়। জমির তিনজন মালিকের মধ্যে দুজন যথাক্রমে জনাব মোজাম্মেল হক কবির এবং খুরশিদা আহমেদ স্বেচ্ছায় চুক্তির ৯/সি এর পরিবর্তে ১/সি এবং ৭/সি এর পরিবর্তে ২/এ ফ্ল্যাট পরিবর্তন করেন। সংশ্লিষ্টদের সম্মতি অনুযায়ী আমার কোম্পানি যথানিয়মে ফ্ল্যাট বিক্রি করে।

জমির তিনজন মালিকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক জমির মালিক সাড়ে চারটা ফ্ল্যাট পাবেন। চুক্তি অনুযায়ী আরও অর্ধেক ফ্ল্যাট কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করে প্রত্যেকে পাঁচটি করে ফ্ল্যাটের মালিকানা ভোগ করবেন। চুক্তি অনুসারে তিনজনের মধ্যে দুজন যথাক্রমে মোজাম্মেল হক কবির এবং আয়েশা আক্তার তাদের প্রাপ্ত সাড়ে চারটি ফ্ল্যাটের সঙ্গে আমার কোম্পানির কাছ থেকে আরও অর্ধাংশ ফ্ল্যাট কিনে তারা প্রত্যেকে পাঁচটি করে ফ্ল্যাট বুঝে নিয়ে দীর্ঘ তিন বছর যাবত ভোগ দখল করছেন। কিন্তু জমির আরও একজন মালিক খুরশিদা আহমেদ তার সাড়ে চারটি ফ্ল্যাটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আরও অর্ধাংশ ফ্ল্যাট না কিনেই মোট পাঁচটি ফ্লাট দীর্ঘ তিন বছর ধরে জবরদখল করে ভোগ করে আসছেন।

এ ব্যাপারে কোম্পানির পক্ষ থেকে যথানিয়মে খুরশিদা আহমেদকে একাধিকবার কোম্পানির মালিকানাধীন ফ্ল্যাটের অর্ধাংশের মূল্য পরিশোধ অথবা ফ্ল্যাটের অর্ধাংশ ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে তাগাদা দেওয়া হয়। কিন্তু খুরশিদা আহমেদ ফ্ল্যাটের অর্ধাংশ ছেড়ে না দিয়ে কিংবা মূল্য পরিশোধ না করেই বিগত সরকারের আমলে প্রভাব খাটিয়ে সালিশ-বিচার বসান। আমার কোম্পানির প্রতিনিধিরা সালিশ-বিচারের মীমাংসা মেনে নিলেও খুরশিদা আহমেদ নিজেই সালিশ-বিচারের সিদ্ধান্ত অমান্য করেন।

গত ১০ অক্টোবরের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রায় একমাস আগে খুরশিদা আহমেদের প্রতিনিধি হিসেবে তার স্বামী সুলতান আহমেদ আমাদের আবাসন প্রতিষ্ঠান প্লিজেন্ট প্রপার্টির কার্যালয়ে আসেন। তিনি জানান যে, ৭/বি (যৌথ মালিকানাধীন) ফ্ল্যাটের অর্ধাংশ তিনি ক্রয় করবেন না। তিনি ফ্ল্যাটের অর্ধাংশ কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেবেন।

Advertisement

কোম্পানির বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী ফ্ল্যাটের অর্ধেকাংশের মালিকানা মালিকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দায়িত্ব। আমি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দুজন সহকারী ওইদিন কখন মহানগর প্রকল্পে গেছেন আমি সে ব্যাপারে অবগত ছিলাম না। কারণ আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা যথানিয়মে যার যার বিভাগের নির্ধারিত দায়িত্ব তারা নিজ উদ্যোগেই পালন করেন। এ কারণেই ওইদিন হাতিরঝিলে মহানগর প্রকল্পে যাওয়ার কথা আমাকে জানানোরও প্রয়োজন ছিল না।

তবে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত হই। আমি জানতে পারি, কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ এবং ফ্ল্যাটের অর্ধেকাংশের মালিক ফজলুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা ওই ভবনে যাওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ দেখতে পান খুরশিদা আহমেদের লোকজন ফ্ল্যাটের অর্ধেকাংশের মালিকানা বুঝিয়ে না দিয়ে বরং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে পুরো ফ্ল্যাটে ডেকোরেশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানার জন্য তাদের ডাকা হলেও তারা দরজা খোলেননি। একপর্যায়ে ফ্ল্যাটের দরজা খোলার পর ফ্ল্যাটের অর্ধাংশের ক্রেতা ফজলুর রহমান, তার দুই ছেলে ও মেয়েজামাই মামুন এবং কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ এবং দুই সহকারীর সঙ্গে খুরশিদা আহমেদের দুই ছেলে, স্বামী এবং তাদের ফ্ল্যাটে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন পেয়ে হাতিরঝিল থানার দায়িত্বরত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

তামিমের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং প্লিজেন্ড প্রপার্টিস লিমিটেড তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে শোকাহত। ওইদিনের ওই দুর্ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। ঘটনার আগেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তামিমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা এজাহারেও ঘটনাস্থলে আমার উপস্থিতির কথা উল্লেখ নেই।

তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে এ ঘটনাকে প্রচার মাধ্যমে দখলদারত্ব হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হলেও এটি কোনো দখলদারির বিষয় ছিল না। এটি যদি দখলদারির ঘটনা হতো এই জমির তিনজন মালিকের অন্যতম মোজাম্মেল কবিরের নাম এজাহারভুক্ত হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। বরং এই জমির তিনজন মালিকের মধ্যে মোজাম্মেল কবিরসহ দুজনই অবগত যে অন্য মালিক খুরশিদা আহমেদ শুরু থেকেই চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিকে ফ্ল্যাটের অতিরিক্ত অর্ধাংশের মূল পরিশোধ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

সুতরাং এটি স্পষ্ট মহানগর প্রকল্পে ১০ অক্টোবরের ঘটনার পেছনে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, কোনো রকমের দখলদারত্ব কিংবা আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। বরং পুরো বিষয়টিই ছিল আমার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তামিমের দুঃখজনক মৃত্যুর কারণে প্রচার মাধ্যমে ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল নিছক একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। তবে যেহেতু একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোম্পানির নাম জড়িয়ে পড়েছে সেহেতু দেশের প্রচলিত আইনগত ব্যবস্থায় আমি আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার কারণে বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এ ঘটনাটিকে পুঁজি করে বিএনপি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা দেওয়ার সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

আমি আবারও বিনীতভাবে জানাতে চাই, তামিমের মৃত্যুর ঘটনা সম্পূর্ণ অনাহুত, অনাকাঙ্ক্ষিত। এর পেছনে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, দখলদারত্ব, অসৎ উদ্দেশ্য সাধন কিংবা কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয় ছিল না।

কেএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস