দেশজুড়ে

পানিবন্দি কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্যাহত গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুরে বন্যায় ৪৫টির মতো কমিউনিটি ক্লিনিক পানিবন্দি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সেবা গ্রহিতারা ভিড় করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।

Advertisement

গত ৪ অক্টোবর টানা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলায় সৃষ্ট বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে। সেইসঙ্গে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। কিন্তু তিন উপজেলায় পানিতে তলিয়ে যায় অন্তত ৪৫টির মতো কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। পানি কমতে শুরু করলেও রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় সেবা কেন্দ্রে যেতে পারছেন না মানুষজন। এতে সেবা ব্যাহত হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি কমার পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া রাস্তা মেরামত না করা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি পাবে না সাধারণ মানুষ।

ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের সঞ্চুর কমিউনিটি ক্লিনিকটির চারপাশে এখনো কোমর পানি। গত ৪ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে সেবা কার্যক্রম।

Advertisement

স্থানীয় রাকিব হাসান বলেন, এই ক্লিনিকটিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০-১২০ জন মানুষ সেবা নিতো। বন্যা হওয়ার পর থেকে ক্লিনিকে রোগী ও দায়িত্বরত কেউ আসছে না। ক্লিনিক বন্ধ থাকলেও বিকল্প সেবা যদি চালু করা হতো তাহলে বন্যার মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হতো।

একই উপজেলার রুপসী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দুটি ভবনে এখনো হাঁটুপানি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানকার দায়িত্বরত মোস্তাফিজুর রহমান নিয়মিত অফিসে আসেন না। বন্যা হওয়ার পর তার উপস্থিতি আরও কমেছে।

কৃষ্ণপুর গ্রামের কুদরত উল্লাহ বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ থাকলে ডাক্তার থাকে না, ডাক্তার থাকলে ওষুধ থাকে না। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। প্রতি মাসের ৮-১০ তারিখের মধ্যেই ওষুধ শেষ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে অডিট কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।

তবে রুপসী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষকে দিতে পারলেই ভালো, সবকিছুরতো সীমাবদ্ধতা আছে। প্রতি মাসে ২২-২৩ আইটেমের ওষুধ আসে, আবার কোনো মাসে আসেই না। ওষুধ আসলে রোগী ছাড়া তার স্বজনরাই নিতে ভিড় জমায়। তখন না দিলেই ভালো না।

Advertisement

চারদিকে বন্যার পানির কারণে ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম গত ৪ অক্টোবর থেকে ব্যাহত হচ্ছে।

ক্লিনিকের হেলথকেয়ার প্রোভাইডর (সিএইচসিপি) রাসেল পালোয়ান বলেন, ক্লিনিকের চারদিকে শুধু পানি আর পানি। এখনো পুরোপুরি কমেনি। নিয়মিত আমি গেলেও রোগীরা আসছে না। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে পুরোদমে সেবা কার্যক্রম চালু করা হবে।

ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জায়েদ মাহবুব খান বলেন, চলমান বন্যায় ফুলপুর সদর, ছনধরা এবং সিংহেশ্বর ইউনিয়নে ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও সেগুলোর আশপাশের রাস্তায় পানি উঠে সেবা ব্যাহত হয়। পানি এখনো দম ধরে আছে। সংশ্লিষ্টরা কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলেও রোগী আসতে পারছে না পানির কারণে। রাস্তাঘাট ঠিক না হওয়া পর্যন্ত মনে হচ্ছে না রোগীরা সেবা নিতে আসবে।

ধোবাউড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাহিদা নাজনীন নিপা বলেন, পুরো উপজেলায় ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। চলমান বন্যার কারণে বেশকিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা ব্যাহত হয়েছে। এখনো রাউতি কমিউনিটি ক্লিনিক, রায় কান্দুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, পাতাম কমিউনিটি ক্লিনিক এবং তারাইকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। গ্রামের সাধারণ মানুষ যেন সেবাবঞ্চিত না হয় এসব বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার জন্য আসছেন। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ সেবা নিশ্চিতের।

হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, উপজেলার বটগাছিয়া কান্দা কমিউনিটি ক্লিনিক এবং আতুয়া জঙ্গল কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ১০টি ক্লিনিকে পানি প্রবেশ করেছিল। সেগুলো থেকে পানি সরে গেলেও রাস্তাঘাট খারাপ ও পানি থাকায় সেবাগ্রহীতারা সেখানে যেতে পারছে না। যার কারণে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেড়েছে। তবে রাস্তাঘাট ঠিক হয়ে গেলে আগের মতো মানুষ সেবা পাবে।

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় তিন উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ঢুকলেও ওষুধ এবং মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এখন পানি কমতে শুরু করলেও রাস্তার কারণে রোগীরা সেবা নিতে আসতে পারছে না। আশা করছি উপজেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার হলে মানুষের সেবাও নিশ্চিত হবে।

এফএ/এএসএম