বিনোদন

এই ফিলোসোফির ওপর আমরা একটা ফিল্ম বানাবো

গত কয়েক বছর দূর্গাপুজায় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে দেখা যায় দুর্গতিনাশিনী রূপে। এ বছরও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তিনি। এ বছর তিনি কাজ করেছেন কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দূর্গারূপে তার বার্তাবাহী আলোকচিত্র। কেন এ আলোকচিত্রায়ন, ভিডিও বানানো? এ উদ্যোগের চেতনা কী, জাগো নিউজকে জানালেন অভিনেত্রী।

Advertisement

জাগো নিউজ: সময়টা নাকি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কক্সবাজারে গিয়ে ফটোশুট করতে অসুবিধা হয়নি?নওশাবা: সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রচার করা হয়। আসলে খুব একটা ঝুঁকি বোধ করিনি। দেশটা তো আমাদের সবার। সবাই মিলে চেষ্টা চলছে, যেন সবাই ভালোভাবে থাকতে পারি, বাঁচতে পারি। সেজন্যই তো এত বড় একটা আন্দোলন করা হল। আমার কোনো অসুবিধা হয়নি।

জাগো নিউজ: সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন? দূর্গা সেজে বিচে চড়ে বেড়ালেন, ঝামেলায় পড়তে হয়নি তো?নওশাবা: একদম না। সবাই খুব সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ। যে রিসোর্টে ছিলাম, তারাও খুব সাহায্য করলো। যখন জানতে পারলো যে, প্লাস্টিক দূষণবিরোধী কাজ করব, তারা খুবই উৎসাহী হলেন।

জাগো নিউজ: আপনি তো অনেকদিন ধরেই এ কাজটা করছেন। এর পেছনের চেতনাটা আসলে কী?নওশাবা: চার বছর ধরে করছি। এবার সমুদ্রে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, যাওয়া হবে কি না কদিন আগেও নিশ্চিত ছিলাম না। আমরা যে টিমটা মিলে কাজ করলাম, কেউ কোনো টাকা-পয়সা নিই না। টাকা আমাদের নেইও। কেবল ভালোবাসা থেকেই কাজটা করা। এর মূল লক্ষ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। দেখুন আমরা সাজেক, কক্সবাজার যেখানেই যাই না কেন, পাহাড়, সমুদ্র, ঝরনায় যাই, খাই এবং প্লাস্টিক ফেলে চলে আসি। প্লাস্টিক পচে না। প্লাস্টিক জমে যে রাসায়নিক তা তো আমাদের বাচ্চার পেটেই যাবে। সমুদ্রে কী পরিমাণ প্লাস্টিক, জলজপ্রাণীদের অসুবিধা হচ্ছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আমরা কি ইতিমধ্যেই প্লাস্টিক-দূষণের ফল পাচ্ছি না?নওশাবা: মানুষের ভেতরটাই তো প্লাস্টিক হয়ে গেছে। দেখবেন, আমরা হিউম্যান টাচ হারিয়ে ফেলেছি। সংবেদনশীলতাকে এখন বোকামি মনে হয়। সবকিছু মেপে মেপে বলতে ও করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের বাচ্চাদেরও বোঝাই না যে, যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলো না, এসব তোমার পেটেই যাবে।

জাগো নিউজ: ত্রিশুল হাতে দূর্গারূপী নওশাবাকে এবার অন্যরকম সব বার্তা দিতে দেখা গেল। সেগুলো নিয়ে বলুন।নওশাবা: আমরা পাঁচ উপাদার নিয়ে কাজ করি। মাটি, পানি, বাতাস, আগুন ও আকাশ। এগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দিয়েছি। দূর্গার মাধ্যমে নারী শক্তিকে কীভাবে রিপ্রেজেন্ট করা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। আমরা সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একত্রে মিলেমিশে থাকবো, এটাই তো সম্প্রীতি? এই ধর্মনিরপেক্ষতাই তো আমরা চেয়েছিলাম। আমার নানুবাড়ি টিকাটুলিতে। বাড়িতে আমরা তুলসি গাছ দেখেছি। স্কুলে কখনও ভাবতে হয়নি যে পাশে কে বসেছে, তার ধর্ম কী! চারুকলায়ও এসব ছিল না। এখন কেন ভাবতে হবে? ধর্মনিরপেক্ষ বা সম্প্রীতির যে বাংলাদেশের কথা আমরা বলি, সেটা কীভাবে পাব আমরা? আমি যেহেতু শিল্পী, শিল্পের ভাষায় আমি সেই প্রশ্ন ও প্রত্যাশা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। আমার অবস্থান ও প্রতিবাদটাও হবে শিল্পের মাধ্যমে।

জাগো নিউজ: দেবী দূর্গার গায়ে তো ফিলিস্তিনের রূপক স্কার্ফও দেখা গেল।নওশাবা: আমি যখন ‘সিদ্ধার্থ’ করি, তখন আমি গৌতম বুদ্ধর কাছ থেকে শিখি। আমি সব ধর্মের ধর্মগুরুর কাছ থেকে শিখি। সেই শিক্ষা আমি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি। সবার বিশ্বাসকে সম্মান করতে হবে, এটাই আমার বিশ্বাস। ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, সেটা কি মেনে নেওয়ার মতো? একটা জাতিকে এভাবে সাপ্রেস করে রাখা হবে কেন যুগের পর যুগ? ফিলিস্তিনের বিষয়টিও এনেছি সে কারণে। আমরা মেনে নিচ্ছি কেন, আমরা কী উদাহরণ দাঁড় করাচ্ছি? মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিন বিষয়ে আমাদের স্ট্যান্ড কী? পৃথিবীতে এভাবে গণহত্যা চলতে পারে না।

জাগো নিউজ: আপনার টিম টুগেদার উই ক্যান ও মোমেন্টওয়ালা সম্পর্কে বলুন। তারা কীভাবে বিনা পারিশ্রমিকে এসব করছে?নওশাবা: আমাদের টিমের সবাই তরুণ। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করে। সবাই সংগ্রাম করছে। কারও থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড, কেউ উবার ড্রাইভার, কেউ ডাক্তার। এরা সবাই মিলে, এ রকম বহু পেশার মানুষ মিলেই তো আন্দোলন করেসেন। আমরা আসলে সহজ-স্বাভাবিক জীবন চাই। পুজার নারু খেতে চাই, ঈদের সেমাই খেতে চা, এতটুকুই। আগেও তো খেতাম, এখন কেন বিষয়টা জটিল হয়ে গেল! আমরা এই টিম নিয়েই ‘ত্রিবেণী’ বানিয়েছিলাম। থিয়েটার করেছি, ফটোস্টোরি করলাম। এই ফিলোসফির ওপর আমরা একটা ফিল্ম বানাবো।

Advertisement

আরও পড়ুন:ত্রিশুল হাতে যে বার্তা দিলেন নওশাবাসেন্সর বোর্ডেও নওশাবা-নিপুন

আরএমডি/জেআইএম