স্বাস্থ্য

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের চাপে অস্বস্তিতে সেবাগ্রহীতারা

রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)। পঙ্গু হাসপাতাল নামে বহুল পরিচিত এ হাসপাতালে পূজার ছুটিতে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম। তবে কমেনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের তৎপরতা। কোনো একটি চেম্বার থেকে রোগী বের হলেই তাকে ঘিরে ধরছেন কয়েকজন।

Advertisement

শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে পরিপাটি পোশাক পরা প্রায় অর্ধ-শতাধিক মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভকে দেখা গেলো হাসপাতালটির দুই বহির্বিভাগে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা হাসপাতালটিতে এসেছেন। চিকিৎসক দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হলেই রিপ্রেজেনটেটিভরা রোগীকে ঘিরে ধরছেন। রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। রিপ্রেজেনটেটিভদের দাবি, রোগীদের অনুমতি নিয়েই তোলা হচ্ছে ছবি। আর রোগীরা বলছেন, বিষয়টি বিব্রতকর।

রোগীর স্বজনরা জানান, ব্যবস্থাপত্রে রোগীর গোপনীয় তথ্যসহ নানান নির্দেশনা থাকে। অনেক সময় পারিবারিক তথ্যও থাকে। তারা জোর না করলেও এমন করে অনুরোধ করেন যে বাধ্য হয়েই ছবি তুলতে দিতে হয়।

Advertisement

আছে বিপরীত চিত্রও। অনেকেই অনুরোধ করার পরও ছবি তুলতে দিতে চান না। দ্বিতীয় তলার আউটডোর-২ এ একটি চেম্বার থেকে বের হন আলতাফ জোয়ার্দার। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এ ব্যক্তির কাছে ব্যবস্থাপত্র দেখতে চান কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ। তবে আলতাফ তা দেখাতে অপারগতা জানান।

তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত জিনিস কেন অন্য কাউকে দেখাবো? তারা তো চিকিৎসক নন। বারবার বললেও তারা অনুরোধ করে গেছেন। এক প্রকার জোর জবরদস্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

প্রেসক্রিপশনটা দেখতে দেওয়া উচিত না। তবে তারাও চাকরি করেন। একজনকে দিয়ে একজনের উপকার হয়। সবাই ঘিরে ধরে, অনুরোধ করে। না দিয়ে আসলে থাকা যায় না- রোগীর স্বজন

স্ত্রীকে নিয়ে নিচতলায় আউটডোর-১ এর একটি চেম্বার থেকে বের হন শফিকুল ইসলাম। তাকেও ঘিরে ধরেন প্রতিনিধিরা। তিনি বলেন, প্রেসক্রিপশনটা দেখতে দেওয়া উচিত না। তবে তারাও চাকরি করেন। একজনকে দিয়ে একজনের উপকার হয়। সবাই ঘিরে ধরে, অনুরোধ করে। না দিয়ে আসলে থাকা যায় না।

Advertisement

সাভার থেকে এসেছেন হালিমা খাতুন। কয়েক মাস পরপর হাড়ের ক্ষয় রোগ দেখাতে হাসপাতালটিতে আসেন তিনি। প্রতিবারই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

হালিমা বলেন, ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই মৌমাছির মতো ঘিরে ধরে। ব্যবস্থাপত্র না দেখাতে চাইলেও বারবার অনুরোধ করে। এটা খুবই অস্বস্তিকর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক হাসপাতালে রিপ্রেজেনটেটিভরা হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না। তবে সরকারি এই হাসপাতালটিতে রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্য কিছুটা বেশি। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির চ্যাটিং গ্রুপসহ বিভিন্ন জায়গায় তা আপলোড করেন তারা।

এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাননি কোনো রিপ্রেজেনটেটিভ। অনেকেই প্রতিবেদন না করারও অনুরোধ জানান।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আমরা কাউকে জোর করি না। অফিসের নিয়ম অনুযায়ী প্রেসক্রিশনের ছবি তুলে চ্যাটিং গ্রুপে পাঠাই। অনেক সময় একজন ছবি তুলে অন্যদের শেয়ার করে। এটা আমাদের চাকরি।

কোম্পানির ওষুধ চিকিৎসক লিখলেন কি না সেটা যাচাই করতে এবং অফিসকে দেখাতেই আমাদের ছবি তুলে পাঠাতে হয়। কত টাকার ওষুধ বিক্রি হবে বা ওষুধের চাহিদা কেমন সেটা দেখতে কোম্পানি ছবি চায়, যোগ করেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালটির পরিচালক কাজী শামিমুজ্জামানের কক্ষে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এসএম/এমএইচআর/জেআইএম