রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তা আর বর্ষা মৌসুম কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটননগরী কুয়াকাটা। পর্যটন মৌসুমের শুরুতে শারদীয় দুর্গাপূজা আর সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকে টইটম্বুর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। তবে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পর্যটকরা।
Advertisement
কুয়াকাটায় ২০০ আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং ৫০টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে বিকল্প জেনারেটর ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এত বেশি যে, জেনারেটর চালু রেখে পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটার হোটেলগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রথম শ্রেণির ও ৪০ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণির হোটেল শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। এগুলোতে দিনের বেশিরভাগ সময়ই চালু রাখতে হয় জেনারেটর লোডশেডিংয়ের কারণে।
হোটেল পায়রা অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে পর্যটকরা অতিষ্ঠ। ৫-১০ মিনিট পরপরই বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। যে কারণে সকাল থেকে একটানা বিকেল পর্যন্ত জেনারেটর চালাতে হয়েছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘পেট্রোল দিয়ে জেনারেটর চালানো, অতিরিক্ত বাজার খরচে আমরা কম দামে খাবার বিক্রি করতে পারি না। এ কারণে আমাদের বদনাম হয় যে কুয়াকাটায় খাবারের দাম বেশি। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।’
যশোর থেকে বেড়াতে আসা হামিদ ও সাহিনুর দম্পতি দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে একটি ননএসি রুম নিয়েছেন। অতিরিক্ত গরমে সেখানে থাকতে পারেননি। পরে হোটেল পরিবর্তন করে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আরেকটি হোটেলে ওঠেন। আগের চেয়ে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে রুম নিতে হয়েছে।
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের রাত্রিযাপনের অন্যতম একটি হোটেল ‘খান প্যালেস’। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে থাকেন তারা। তাদের প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে জেনারেটর খরচটা বেশি।
হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল খান বলেন, ‘আমাদের মান, পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে এর বিকল্প কিছু করার নেই। কেননা পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। হোটেলের কক্ষভাড়া চাইলেও কম রাখা যায় না।’
Advertisement
জানতে চাইলে কুয়াকাটা সাব-স্টেশনের এজিএম মো. মোতাহার জানান, কুয়াকাটায় থাকা আবাসিক হোটেলগুলো তাদের প্রয়োজনের শক্তিশালী মিটার স্থাপন করে। যে কারণে অতিরিক্ত লোড নিতে না পারায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটে লোডশেডিং দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, সাব স্টেশনে জনবল কম থাকায় আমরা ঠিকমতো সার্ভিস দিতে পারছি না। এজন্য সমস্যা হচ্ছে। তবে জনবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জনবল পেলে আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন শুভ বলেন, পর্যটকের চাপ একটু বেশি রয়েছে। তাই পর্যটকের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠে টহল টিম কাজ করছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসআর/এএসএম