ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) গুচ্ছভুক্ত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। এ কার্যক্রমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদনে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের সইয়ের প্রয়োজন হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান ক্যাম্পাসে না আসায় তার সইয়ের স্থানে তার সই সম্বলিত সিল ব্যবহার করে ভর্তি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
Advertisement
অন্য ডিনরা বলছেন, ডিনের সই অন্য কারও করার ক্ষমতা নেই। একটি অনুষদের ডিন হিসেবে এমন কর্মকাণ্ডে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে ওই ডিনের অনুপস্থিতি ও সিল দিয়ে কার্যক্রম চালানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপাচার্যও। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টারা বলছেন, এভাবে স্বাক্ষরের সিল বানিয়ে ব্যবহারের নিয়ম নেই। এটি বৈধ নয়।
সরেজমিন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসে দেখা যায়, সেখানে ডিন অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার খাবিরুল ইসলাম ডিনের সই সম্বলিত সিল ব্যবহার করে সঙ্গে শুধুমাত্র তারিখ লিখে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা সেই সিল দেওয়া ফরম নিয়েই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করছেন। সিল দেওয়ার বিষয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বিভিন্নভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিতে গেলেও রাজি হননি। সই সম্বলিত ওই সিলের ছবিও তুলতে দেননি ওই কর্মকর্তা।
Advertisement
পরবর্তী সময়ে কর্মকর্তা খাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিন স্যার জরুরি কাজে ছুটিতে আছেন। তিনি আমাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। এরআগেও বিভিন্ন সময় এমন কাজ হয়েছে।’
তবে রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোঁজ নিলে জানা যায়, ছুটির জন্য কোনো আবেদন করেননি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মতিনুর রহমান। তবে উপাচার্যের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে তারা বলতে পারেননি।
বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য অনুষদের ডিনদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ডিনের ক্ষমতা অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যায় না। এজন্য তাদের ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়া ডিনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়া অন্য কেউ করতে পারেন না।
এ বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘ডিন কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেন না। ডিনের কাজ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন। ডিনের সিগনেচার ডিনকে সশরীরে উপস্থিত থেকেই করা উচিত। আর যদি উনি জরুরি কোনো কারণে না থাকতে পারেন, তাহলে তার অধীন কোনো বিভাগের একজন সিনিয়র অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে এরকম বিধিবদ্ধ কোনো নিয়ম নেই।’
Advertisement
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘ভর্তি সংক্রান্ত ফরমে ডিনের সিগনেচারই লাগবে। ডিনের অবর্তমানে তার দায়িত্ব একমাত্র উপাচার্য পালন করতে পারেন। আর কেউ এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।’
‘রাশিদ আসকারী (সাবেক ভিসি) কলা অনুষদের ডিন থাকাকালীন সময় থেকে সইয়ের সিল ব্যবহারের এই বাজে প্র্যাকটিসটা চলছে। এটা কোনোভাবেই নিয়ম নেই। নিয়ম হচ্ছে সশরীরে সিগনেচার করা। শুধু ভর্তি নয়, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে যেখানে ডিনের সরাসরি সিগনেচার করাই শ্রেয়’, যোগ করেন অধ্যাপক এমতাজ হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, ‘আমি একটি জরুরি কাজে উপাচার্যকে অবগত করেই ঢাকায় এসেছি। আর ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখার জন্য আমি আমার সিগনেচার স্ক্যান করে অফিসের কর্মকর্তাদের সিল দেওয়ার অনুমতি দিয়েছি। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময় ডিনরা এভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
জরুরি কী কাজে বাইরে আছেন এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি মতিনুর রহমান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদগুলোতে নিয়োগ পেতে ঢাকায় অবস্থান করে লবিং করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি এক শিক্ষক বলেন, ‘মতিনুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করে তদবির করছিলেন। উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পর এখন উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ পেতে লবিংয়ের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। ভর্তি কার্যক্রমের মাঝেও ক্যাম্পাসে না থাকার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।’
সই হিসেবে সিল ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘সইয়ের সিল বানানোর সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। ওই দপ্তরের প্রধান এ ধরনের সিলের জন্য দায়ী হবেন।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ভর্তি ফরমে ডিনের সই আবশ্যক। আমি খবরটা শুনে অবাক হচ্ছি। সিলে তো সিগনেচার হয় না কখনো। এটা কোনো ক্লাসিফাইড সিগনেচার না। একজন ডিনের সই কোনোভাবেই একজন কর্মকর্তা এভাবে দিতে পারেন না। তিনি কীভাবে এটাকে গ্রহণ করলেন, এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলবো।’
ছুটি নেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে মৌখিকভাবে একবার বললেন যে ঢাকায় গিয়েছেন, দ্রুত চলে আসবেন। এখন ভর্তি কার্যক্রম চলছে, সব ডিন উপস্থিত উনি এখনো ফেরেননি। এসময় এমন কাজ করা ঠিক না। আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবো।’
মুনজুরুল ইসলাম/এসআর/এএসএম