ধর্ম

অভাবী ঋণগ্রস্তকে ছাড় দেওয়ার ফজিলত

ইসলামে ঋণের বিনিময়ে সুদ গ্রহণ করা হারাম। কাউকে ঋণ দিলে তাতে কোনো রকম ফায়েদা গ্রহণ করার উদ্দেশ্য থাকা নিষিদ্ধ। ফায়েদা গ্রহণের উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো বিপদগ্রস্তকে ঋণ দেওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় ‘করজে হাসানা’ বলা হয় এবং এটি সদকার মতোই উত্তম আমল গণ্য হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো স্বার্থ ও ফায়েদামুক্ত ঋণ দিলে তা সদকা করার অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায়। (মুসনাদে আহমদ: ৩৯১১)

Advertisement

ঋণ গ্রহণকারী যদি অভাবগ্রস্ত হয়, ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে তাকে ছাড় দেওয়া, ঋণ পরিশোধের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া, সাধ্য থাকলে কিছু ঋণ বা সম্পূর্ণ ঋণ মাফ করে দেওয়াও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ। আবুল ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অক্ষম ঋণগ্রস্তকে সময় দেবে অথবা তার ঋণ মওকুফ করবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে তার (আরশের) ছায়া দান করবেন। (সহিহ মুসলিম: ৩০০৬)

আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এক লোক মানুষের সাথে লেনদেন করত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাবগ্রস্তের কাছে যাবে তখন তাকে ক্ষমা করে দেবে। হয়ত আল্লাহ আমাদেরকেও ক্ষমা করে দেবেন। তারপর ওই ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে মিলিত হলো, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৯০)

বুরায়দা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি অভাবী ব্যক্তিকে ঋণের পরিশোধের ব্যাপারে ছাড় দেবে, সে ছাড় দেওয়া প্রতিদিনের বিনিময়ে সদকার সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে দেবে সেও প্রতিদিনের বিনিময়ে সদকার সওয়াব পাবে। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৪১৮)

Advertisement

আর ঋণগ্রহণকারী ব্যক্তি যদি অভাবগ্রস্ত না হয়, তার যদি ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকে, তাহলে তার কর্তব্য নিজের কথার মর্যাদা রক্ষা করা এবং ঋণ পরিশোধের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া। ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ করতে গড়িমসি করা জুলুম। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সক্ষম ব্যক্তির টালবাহানা করা অত্যাচারের শামিল। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৫৬)

দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ না করলে পরকালে নিজের আমল দিয়ে এবং ঋণদাতার গুনাহের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করলেও ঋণ মাফ হয় না। নবিজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদের সব পাপ ক্ষমা করা হলেও অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা করা হয় না। (সহিহ মুসলিম: ৪৯৯১)

আরেকটি হাদিসে, রাসুল (সা.) বলেন, কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। ( সহিহ বুখারি ৬৫৩৪)

ওএফএফ/জিকেএস

Advertisement