পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে অক্টোবর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টা ধরা পর্যটনের ‘পিক সিজন’। গ্রীষ্ককালে খুব বেশি পর্যটক রাঙ্গামাটি ভ্রমণ না করলেও বর্ষার শেষে শরতের মাঝামাঝি থেকে হালকা শীতের আমেজ আসতেই ভিড় করেন পর্যটকরা।
Advertisement
সম্প্রতি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের কারণে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। এতে পর্যটকশূন্য এই নগরী। দৈনিক এক থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব রাঙ্গামাটির (টোয়ার) সভাপতি ও গরবা ট্যুরিজমের সিইও বাদশা ফয়সাল বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা শুধু একটা নির্দেশনা নয়; দীর্ঘমেয়াদি একটা নেতিবাচক ফল বয়ে আনবে আমাদের জন্য। বাইরে থেকে সবাই ভাববে পাহাড় নিরাপদ নয়, সেখানে ঘুরতে যাওয়া নিরাপদ হবে না। সেক্ষেত্রে প্রত্যাহারের পরও কতটুকু এটা রিকভার করতে পারবো আমরা বুঝতে পারছি না।’
হাউজ বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বার্গি লেকের পরিচালক বাপ্পী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘শুধু নিরাপত্তার জন্য পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখা দরকার।’
Advertisement
তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় টানা ছুটিতে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো অগ্রিম বুকিং ছিল; সেগুলো ক্যান্সেল করতে হচ্ছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যদি এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে, তাহলে এই খাতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।
আরও পড়ুন: বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় ২৩ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কাকাপ্তাই হ্রদে পর্যটকদের নৌ বিহারের জন্য কয়েকশ ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। এর ওপর অন্তত এক হাজার মালিক ও শ্রমিকের সংসার নির্ভরশীল। পর্যটক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
রাঙ্গামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘এমনিতেই এতদিন পর্যটক ছিল না। পূজার টানা ছুটিতে যখন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন এমন নির্দেশনায় আমাদের মালিক-শ্রমিক সবার মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে।’
শিলছড়ি নিসর্গ রিভার ভ্যালি অ্যান্ড পড হাউজ পরিচালক মো. সরোয়ার বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে এখানে সাধারণ পর্যটকরা আসতে পারছেন না। বিগত চার মাস ধরে পর্যটকের আনাগোনা কমে গেছে। আমাদের ৩০ জনের মতো স্টাফের বেতন দিতে কষ্ট হচ্ছে। অথচ আমাদের এই পর্যটন কেন্দ্রে সবসময় পর্যটকে ভরপুর থাকে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের সুনজর কামনা করি।
Advertisement
রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম। তিনি জানান, গত কয়েকমাসের লোকসান পূজার এই ছুটিতে কাটিয়ে তোলার লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় ব্যবসায়ীরা আরও লোকসানে পড়লেন। অনেক হোটেলে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে খরচ কমানোর জন্য।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি চেম্বর অব কমার্সের পরিচালক আলী বাবর জাগো নিউজকে বলেন, ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন সেক্টরে জড়িত ব্যবসায়ীদের দৈনিক গড়ে এক থেকে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এটা যদি ৩০ দিন চলে তাহলে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আমরা এ অবস্থান থেকে প্রতিত্রাণ চাই।
সাইফুল উদ্দী/এসআর/জেআইএম