সাহিত্য

সাহিত্যে নোবেলজয়ী হান কাংয়ের লেখকসত্তা

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। ১০ অক্টোবর বিকেল ৫টায় সুইডেনের স্টকহোম থেকে এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। ২০১৬ সালে তিনি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার ম্যান বুকার লাভ করেন। কোরিয়ান ভাষায় লেখা নিজের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’র জন্য তিনি বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। লেখালেখির জগতে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন।

Advertisement

হান কাং সাহিত্যে প্রথম এশীয় নারী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং তৃতীয় কোরিয়ান নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ১৯৭০ সালের ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ বছর বয়সে তিনি পরিবারসহ সিউলে চলে যান। তিনি ঔপন্যাসিক হান সিউং-ওনের মেয়ে। ফলে একটি সাহিত্যিক পরিবেশ তিনি পেয়েছেন। লেখালিখির পাশাপাশি হান কাং শিল্প ও সংগীতের প্রতিও গভীরভাবে আকৃষ্ট হন, যা তার সমগ্র সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। তার ভাই হান ডং রিমও একজন লেখক।

১৯৯৩ সালে হান কাং প্রথমে কবিতা দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন, যা ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে তার প্রথম গদ্যসংকলন ‘লাভ অব ইয়োসু’ প্রকাশিত হয়। পরে তিনি একের পর এক উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশ করেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ২০০২ সালে প্রকাশিত ‘ইওর কোল্ড হ্যান্ডস’। সেখানে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটে উঠেছে।

আরও পড়ুন লেখা তৈরি হয় শিলালিপির মতো: মোস্তফা তারিকুল আহসান  রম্যগল্প: কমলাকান্ত ও প্রেত 

হান কাংয়ের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ২০০৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’র মাধ্যমে, যা তিনটি অংশে লেখা। এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইয়ং হাই যখন খাদ্যাভ্যাসের সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন এর সহিংস পরিণতির কাহিনি তুলে ধরা হয়। তার ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’ উপন্যাসে একজন নারী সমাজে মাংস খাওয়ার রীতিনীতি ত্যাগের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। সেই কাহিনির ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয় উপন্যাসটি।

Advertisement

প্রাণীরক্ষা আন্দোলনে তার উপন্যাস ব্যাপক ভূমিকা রাখে। উপন্যাসের কাহিনি গড়ে ওঠে ইয়ং হাই নামের এক নারীকে কেন্দ্র করে। ইয়ং হাই কর্তব্যনিষ্ঠ স্ত্রী। তার বিনয়ী স্বামী একজন অফিসকর্মী। মানুষের বর্বরতার প্রতিবাদে এক সময় মাংস খাওয়া বর্জন করেন ইয়ং হাই। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে বৃক্ষ হিসেবে কল্পনা করতে শুরু করেন। গীতধর্মী ও ট্রাজেডি উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে একজন নারীর পারিবারিক ঐতিহ্য ও সমাজের রীতিনীতি উপেক্ষা করার চিত্র এ উপন্যাসে নিখুঁত, সংক্ষিপ্ত ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

হান কাংয়ের সাহিত্যকর্মে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা গভীরভাবে ফুটে ওঠে। যা প্রাচ্য দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার প্রতিটি রচনায় মানব জীবনের ভঙ্গুরতাকে তুলে ধরেন। যেখানে দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যকার সম্পর্ককে অনন্যভাবে তুলে ধরা হয়। তাই কাব্যময় ও পরীক্ষামূলক লেখার শৈলীতে তিনি আধুনিক গদ্যের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হন।

একই সঙ্গে তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এবং উপন্যাস লেখেন। তার উপন্যাস হলো- ‘ইয়েসুতে প্রেম’, ‘কালো হরিণ’, ‘দ্য উইন্ড ব্লো, যাও’, ‘সাদা’, ‘বিদায় বলবেন না’, ‘লাল ফুলের গল্প’ প্রভৃতি। প্রবন্ধ ‘শান্তভাবে গাওয়ার জন্য একটি গান’, ‘ভালোবাসা এবং ভালোবাসার চারপাশের জিনিস’, ছোটগল্প ‘টিয়ার বক্স’, ‘থান্ডার লিটল ফেইরি, লাইটনিং লিটল ফেইরি’ এবং কবিতা সংগ্রহ ‘আমি ড্রয়ারে ডিনার রেখেছি’ উল্লেখযোগ্য।

এসইউ/জিকেএস

Advertisement