দুই মাস আগেও রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরের ফুটপাত ছিল চাঁদাবাজদের দখলে। বিক্রি হোক কিংবা না হোক, দোকান ভেদে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। চাঁদার টাকার পাশাপাশি দাম না দিয়েই পণ্য নিয়ে যেতো লাইনম্যানরা। তাতে প্রতিবাদ করার সুযোগও ছিল না।
Advertisement
তবে বর্তমানে চিত্র পাল্টেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন্ধ হয়েছে চাঁদাবাজি। ফলে স্বস্তি ফিরেছে ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ীর। আগের মতো একই পরিমাণ বিক্রিতেও কিছুটা বাড়তি টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) মিরপুর ১০ নম্বরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন আর ফুটপাতে বসলে দিতে হয় না চাঁদা। মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের নিচে বসলে ঝামেলা করছে না পুলিশ। এমন পরিস্থিতি যেন বজায় থাকে সে আশা এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে রয়েছে ৪ টি সড়ক। এগুলোর একটি গিয়েছে মিরপুর ১, একটি মিরপুর ১৩, একটি মিরপুর ১২ এবং অপরটির গন্তব্য কাজীপাড়া।
Advertisement
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গোলচত্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের ফুটপাতে হরেক পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সকালে বেশিরভাগ বিক্রেতাকে দেখা যায় পণ্য গোছাতে ও দোকান খুলতে ব্যস্ত। তখনও অনেক দোকান ছিল বন্ধ, আবার অনেকেই ক্রেতাকে দেখাচ্ছিলেন পণ্য। মেট্রো স্টেশনের নিচের ফুটপাত দখল করে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গোলচত্বরের আশপাশের ফুটপাত জমজমাট হয় সন্ধ্যার পরে। অন্তত ১০ জন বিক্রেতা জানালেন চাঁদাবাজি এখন নেই। ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে বেচাকেনা করতে পারছেন।
আরও পুড়নসেপ্টেম্বরে রপ্তানি বেড়েছে ৬.৭৮ শতাংশবাজারে সবজির দামে আগুন, টমেটোর কেজি ২৮০ টাকাবাচ্চাদের খেলনা ও ভ্যারাইটিজ আইটেম বিক্রেতা রাজুর দেখা মিললো ফায়ার সার্ভিস গেট সংলগ্ন ফুটপাতে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো চাঁদাবাজি নেই। কোনো লাইনম্যান নেই। এমন পরিস্থিতি সারাবছর থাকুক এটা আমাদের প্রত্যাশা।’
তবে বেচাকেনায় দুর্দশার কথা জানালেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম হাওলাদার। তার সঙ্গে দেখা মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সের বিপরীত সড়কে। মেয়েদের পোশাক বিক্রি করেন এই ব্যবসায়ী। জাগো নিউজকে সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘দুর্গাপূজা যাচ্ছে, ছুটির দিনও যায়- কিন্তু বেচাকেনা আশানুরূপ না। প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা বেচাকেনা হয়। করোনার পরেও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি ছিল প্রতিদিন। এখন চাঁদাবাজি নেই এটা স্বস্তির। তবে বিদ্যুৎ খরচ আছে। সংসারের জন্য তো কিছু নিয়ে যেতে হয়।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘চারজনের সংসার। আমার পায়ে সমস্যা। অন্য কাজ করতে পারি না। দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আছে, বাজারঘাট আছে, বাসা ভাড়া আছে। প্রতিদিন যদি ৪ হাজার টাকা বিক্রি না হয় বাসায় কিছু নিয়ে ফেরা যায় না।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। মানুষ জামা-কাপড় কিনছে না।
পুরাতন বই বিক্রেতা শহিদুল বলেন, ‘শুনেছি সামনে অনেক নিয়োগ পরীক্ষা। কিন্তু বই বিক্রি আগের মতই কম। কেনাকাটা কম করছে মানুষ।’
গার্লস আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা রাইসুল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার পতনের আন্দোলন ও পরে শ্রমিক বিক্ষোভে অনেকের চাকরি গেছে। অনেকের উপার্জন নাই। চাল, ডাল, ডিম, মসলা সবকিছুর দাম চড়া। মানুষ শৌখিন পণ্যে খরচ করছে না।’
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টারাও।
এসএম/কেএসআর/জেআইএম