ভ্রমণ

চাকচিক্যের নগরী দুবাই ভ্রমণে কী কী ঘুরে দেখবেন?

রুমেল আহসান, সাংবাদিক

Advertisement

দুবাইয়ের নাম শুনতেই সবার মাথায় আসে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দালান ‘বুর্জ খলিফা’র নাম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান, নিরাপদ শহর ও আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশের নাম হলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষের কাছে দুবাই পরিচিত শব্দ।

বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পছন্দের শীর্ষে আছে দুবাই। তাই গত বছরের ১৭ অক্টোবর গিয়েছিলাম ‘চাকচিক্যের নগরী দুবাই’ ভ্রমণে।

দুবাই বছরের যে কোনো সময়ে দেখার জন্য একটি চমৎকার শহর। কিন্তু অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুবাই ভ্রমণের আদর্শ সময়। তখনকার সময় তাপমাত্রা সাধারণত ৩০ ডিগ্রী থেকে সর্বনিম্ন ২০ ডিগ্রি থাকে। তবে বলাবাহুল্য, মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম থাকে।

Advertisement

১৭ অক্টোবর রাত ১০টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আরব আমিরাতের স্থানীয় সময় রাত ১টায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। হাজার হাজার যাত্রী থাকলেও মাত্র কয়েক মিনিটে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বুকিং করা লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হলাম।

আমার প্রবাসী আপন দুই ভাই ও এক বন্ধু আমাকে রিসিভ করলেন। দুবাই থেকে শারজাহ প্রদেশের খরফাক্কানের আল বিদিয়ায় আমার বড় ভাইয়ের বাসায় উঠলাম। সেখানে পৌঁছে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে ঘুরতে বের হলাম।

প্রথম দিন

আরব আমিরাত ভ্রমণে এসেছি, এমন খবর পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের এলাকার প্রবাসী ভাইয়েরা যোগাযোগ করলেন। সবাই দিনেরবেলা কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্ধ্যায় ও রাতে এসে দেখা করলেন। আমিও তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। এভাবে এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলে আড্ডা জমে উঠলো।

ক্ষুদ্র একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমাকে চেনেন, জানেন এরকম সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ও পাশ্ববর্তী এলাকার অসংখ্য প্রবাসী খোঁজখবর নিলেন। রাতের খাবার খেয়ে বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

Advertisement

আরও পড়ুন মাটির নিচে যেন আরেক সিঙ্গাপুর! সিঙ্গাপুর ভ্রমণে কোথায় খাবেন দেশি খাবার?  দ্বিতীয় দিন

দেশে থাকাকালীন দুবাই ভ্রমণের যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন থেকে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব সেই প্ল্যান করছিলাম। এর মধ্যে একটি স্থান আল বিদিয়া মাটির মসজিদ। এটি আরব আমিরাতের ফুজিরা আল বিদিয়া নামক স্থানে রয়েছে। প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো এই প্রাচীন মসজিদ।

আমাদের এলাকার এক প্রবাসী ছোট ভাইকে সঙ্গে করে আমার ভাইয়ের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট হেঁটে আল বিদিয়া মাটির মসজিদে গেলাম। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে জানতে পারলাম, ৫৩ বর্গমিটার (৫৭০ বর্গফুট) আয়তনজুড়ে নির্মিত হয় প্রাচীন এ মসজিদ। আরব উপসাগরের তীরে নৌপথে যোগাযোগের মাধ্যম থাকায় অনেকের মতে, ইসলাম প্রচারের জন্য এ অঞ্চলে আগত কয়েকজন সাহাবা হাজার বছর আগে পাহাড় কেটে এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

মসজিদটির পুরোটাই মাটি ও পাথরের তৈরি। একমাত্র পিলারের ওপর ভর করে আছে মসজিদটি। চারপাশে আছে দেওয়াল। প্রার্থনা কক্ষের নেই কোনো জানালা। কাঁচা মাটির পলেস্তরার স্তর দেওয়া আছে দেওয়ালে। প্রার্থনা কক্ষের ভেতরে ছোট মিহরাব ও একটি মিম্বার আছে।

মসজিদের ছাদে ভিন্ন রকমের চারটি গম্বুজ, মসজিদের সামনে একটি পানির কূপ ও পেছনে দুটি দুর্গ রয়েছে। মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরলাম। তারপর রাতে আরব আমিরাতের বিভিন্ন এলাকায় থাকা আমার পরিচিত প্রবাসী ভাইয়েরা দেখা করতে আসলে আমি তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি।

তৃতীয় দিন

সকালে ঘুম থেকে নাশতা করে আমার এক প্রবাসী মামার সঙ্গে বের হলাম কৃত্রিম জলপ্রপাত দেখতে। আল বিদিয়া থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে গেলাম খোরফাক্কানে। সেখানে সমুদ্র সৈকত, পার্ক ও কৃত্রিম জলপ্রপাত এক জায়গায়। মনুষ্যসৃষ্ট এই জলপ্রপাত টাওয়ারটি ৪৫ মিটার উঁচু একটি প্রাকৃতিক ক্লিফের উপর অবস্থিত। জলপ্রপাতের পাশেই কয়েকটি ক্যাফে ও পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস আছে।

এর ঠিক পাশেই খোরফাক্কান অ্যাম্ফিথিয়েটার, একটি বিস্তৃত রোমান অনুপ্রাণিত কাঠামো যা একটি স্থানীয় ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে। তারপর সন্ধ্যায় আবার কৃত্রিম জলপ্রপাতে গিয়ে দেখি আরবের শেখরা পরিবার পরিজন নিয়ে সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে এসেছেন। সেখানে পার্কে বসে কেউ কেউ আড্ডা দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জলপ্রপাতে ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে অনেকে ভিড় করছেন।

চতুর্থ দিন

খোরফাক্কানে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওইদিন রাতে খোরফাক্কানের পার্ক এলাকা যে ‘একখণ্ড ফেঞ্চুগঞ্জে’ (আমার জন্মস্থান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা) হয়ে যায়। প্রবাসীদের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হয়।

আরব আমিরাতের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রবাসী ভাইয়েরা এসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় মিলনমেলায় পরিণত হয় খোরফাক্কান পার্ক। সংবর্ধনা শেষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয় একটি ক্যাফেতে। আরব সাগরের তীরে ওই ক্যাফেতে ফ্রাই রাইসসহ সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ফ্রাই করে খাওয়া হয়।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার এই মিলনমেলা ছেড়ে কেউ যেতে চাইছেন না। যখন ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা, তখন সব প্রবাসী ভাইয়েরা নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য গাড়িযোগে রওনা হন। পরবর্তী পর্ব পড়তে জাগোনিউজে চোখ রাখুন।

জেএমএস/জিকেএস