শারীরিক সুস্থতার মতোই মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি। শারীরিক অসুস্থতা দ্রুত সারিয়ে ফেললেও মানসিক সুস্থতা সহজে মেলে না। এজন্য নিজের মধ্যেও যেমন বাড়াতে হয় ইতিবাচক চিন্তা, ঠিক তেমনই এ সময় পরিবার ও পরিজনদেরও পাশে রাখতে হয়।
Advertisement
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে অসংখ্য মানুষ উদ্বেগ, হতাশাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে আমাদের সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এখনো ট্যাবু হিসেবেই রয়ে গেছে।
প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে ও মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান এই দ্রুতগতির জীবন, সামাজিক চাপ, প্রযুক্তিগত নির্ভরশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সবার মধ্যেই মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলেছে। শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে পরীক্ষার চাপ, সামাজিক চাপ ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছেন। যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় উদ্বেগ।
Advertisement
অনন্ত তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথা বলা ও সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজা অত্যন্ত জরুরি। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মানসিক সমস্যায় ভুগলেও মানুষ তা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। এ ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা ও পেশাদার সহায়তা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া ও প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণ করলে ডিপ্রেশন ও হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আত্ম-চিন্তা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও পেশাদারদের থেকে সহায়তা নেওয়া মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বছর দুয়েক আগে ‘হেলিয়ন’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না, তবে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতন।
আরও পড়ুন একটানা ইয়ারফোন ব্যবহারে বাড়ছে যেসব রোগের ঝুঁকি ভালো জীবনসঙ্গী হওয়ার উপায়প্লস ওয়ান জার্নালের তথ্যমতে, শিক্ষার্থীরা প্রায়ই উদ্বেগ, হতাশা, পরীক্ষা-ভীতি ও একাকীত্বের মতো মানসিক সমস্যায় ভোগে। এছাড়া আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যাগুলো শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে ও তারা প্রায়ই মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন অনুভব করে।
Advertisement
নিজের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে কিছু সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ও নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা, মানসিক চাপ কমাতে শারীরিক ব্যায়াম করা, প্রিয়জনদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা, শখের কাজ করা, পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনা সভার আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে। যেখানে তারা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কৌশল শিখতে ও প্রয়োগ করতে পারে।
তিতুমীর কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সোলায়মান আলী বলেন, ‘শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য।’
‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের কলেজে একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। যেখানে তাদের মানসিক সমস্যা যেমন- হতাশা, বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। কারণ এসব সমস্যার সরাসরি প্রভাব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিতুমীর কলেজ ‘কাউন্সেলিং সেন্টার’ নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরামর্শ দেয়। এছাড়া আমাদের মনোবিজ্ঞান বিভাগ নিয়মিতভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রচেষ্টায় কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন করতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষা ও চর্চা করতে পারে।’
অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব কার্যক্রম নিয়মিত করা হলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়বে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করার ক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে।
সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়লে শুধু শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানেই কাজে আসবে না, বরং সমগ্র সমাজের স্বাস্থ্যবান পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
জেএমএস/এএসএম