মানসিক স্বাস্থ্য হলো মানুষের মন, আচরণ ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের একটি দিক। আমরা কি চিন্তা করি, কি অনুভব করি, জীবনকে সামলাতে আমাদের আচার ব্যবহার কি রকম হবে- এগুলোই আসলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য।
Advertisement
একজন মানসিক ভাবে সুস্থ মানুষ সবসময়ই নিজের সম্পর্কে ভালো ভাবে, কখনোই আবেগ যেমন রাগ, ভয়, হিংসা, অপরাধবোধ বা উদ্বেগ দ্বারা প্রভাবিত হবে না।
১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সবার জন্য এবং সর্বক্ষেত্রে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। এ গুরুত্ব অনুধাবন করেই এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার এখনই সময়।
একটি সুষ্ঠু, সমর্থনমূলক এবং সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে কর্মীরা যেমন কাজের প্রতি আরো মনোযোগী হবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানও হবে লাভবান, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের পরিবারে ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
Advertisement
কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মীর পরিচয়ে পিতা-মাতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেয়া হয়েছে। তাদের কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত হলে পরিবারের মানসিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। কারণ সেখানে শিশুদের অবস্থান আছে। পরিবারের মা-বাবার সঠিক আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা ও তার ভবিষ্যৎ জীবন সবটাই নির্ভর করে পরিবারের ওপর। তাই সাংসারিক জীবনে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে মা-বাবাকে শিশুর প্রতি হতে হবে নমনীয়। যে সংসার জীবনে মা-বাবার মধ্যে সবসময় ঝগড়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অশালীন ভাষা বিনিময় হয় শিশুর সামনে, তা দেখে দেখে শিশুরা শেখে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঠিকমতো হয় না।
একটি শিশু জন্মের পর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মানসিক বিকাশের বিভিন্ন ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। একটি ধাপ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পরেই কেবল সে পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেদের আবেগ, চাওয়া পাওয়া কোনোভাবেই তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। বাবা-মায়েরা মনে করেন ঝগড়াঝাটিতে অবুঝ শিশুদের মনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না; মনে করেন শিশুরা কিছু বুঝতে পারেনি বা আড়ালে ঝগড়াঝাটি হলে শিশুরা সেটার কিছুই বুঝতে পারে না। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা, শিশুর ছয় মাস বয়স থেকেই পিতা-মাতার ঝগড়ার প্রভাব পড়া শুরু হয় তাদের শিশুমনে।
দুই বছর বয়স থেকে শিশুরা তাদের বাবা - মার আচরণ বুঝতে শুরু করে। বাড়িতে যখন তারা বাবা-মায়ের মধ্যে কোনো ধরনের নেগেটিভ সম্পর্ক দেখে, তখন তাদের হৃদকম্পন বেড়ে যায়, মানসিক চাপ তৈরি হয়। এতে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টাতে পারিবারিক কলহ শিশুর ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কী রকম হবে, পড়ালেখায় সে কেমন করবে, এমনকি ভবিষ্যতে শিশু যেসব সম্পর্কে জড়াবে, সেগুলো কেমন হতে পারে, এসব কিছুর ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুর জীবনের প্রথম তিন বছর বাবা মায়ের আলাদা থাকা শিশুকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা পরে এ শিশুদের উন্নত পরিবেশে রেখেও কোন ভালো আচরণ পাওয়া যায় না। পরিবারের বাইরে বেড়ে উঠা শিশুর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা, আগ্রাসী মনোভাব, চ্যালেঞ্জিং আচরণগুলো বেশি দেখা যায়।
Advertisement
এজন্য শিশুকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে ভেবে দেয়া উচিত। তা নাহলে শিশুটি আপনার কথার ওপর আস্থা হারাতে শুরু করবে। শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হওয়া জরুরি। এতে ভবিষ্যৎ জীবনের চলার পথ সুগম হবে, দেশ ও সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
লেখক: কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল।প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।
এইচআর/এএসএম