দেশজুড়ে

কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল ৯০-৯৫ শতাংশ বুকড

শরতের মিষ্টি রোদ আর সাদা মেঘ হঠাৎ কালো আবরণে বৃষ্টি ঝরায়। এমন সময়ে প্রকৃতির মাঝে বিরচণ করতে ভালোবাসেন ভ্রমণপ্রেমীরা। কিন্তু চাইলেও যখন-তখন বেড়াতে পারেন না অনেকেই। আর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত দুই মাস এক প্রকার বন্দী রয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে, শারদীয় দুর্গাপূজার বন্ধের সঙ্গে সপ্তাহিক এবং নির্বাহী আদেশ মিলিয়ে চারদিনের ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। এসময়টা কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিয়েছেন ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে পার্বত্য তিন জেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে সবার লক্ষ্য এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের বুকিং দেখে সেটিই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

ব্যবসায়ীদের মতে, ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম থাকবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে ১০-১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল বুকিং হয়েছে। আর ১৪-১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তবে পর্যটক টানতে প্রায় প্রতিটি হোটেলে চলছে ৪০-৪৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ নূর সুমেল বলেন, দীর্ঘদিন মন্দা যাওয়া পর্যটনের হয়তো সতেজতা ছড়াবে বৃহস্পতিবার হতে শুরু হওয়া চারদিনের ছুটি। হঠাৎ ছুটি পেয়ে ভ্রমণপিপাসুরা পরিবারে নিয়ে কক্সবাজার আসতে আগাম বুকিং দিয়েছেন। চার দিনের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম। নিঃষ্প্রাণ পর্যটনে সতেজতা ফেরাতে আমরা অধিকাংশ ৪০-৪৫ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি। পর্যটকদের ভোজনে ভিন্নস্বাদ দিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ উৎসবের আয়োজন রয়েছে। যেকেউ চাইলে স্বল্পমূল্যে ৮ ক্যাটাগরীর ইলিশ রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।

ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে প্রায় পাঁচশত। এসব আবাসনে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারকা হোটেলগুলো ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। গেস্ট হাউসগুলোও কমবেশি বুকিং হয়েছে বলে জেনেছি। পূজার ছুটি দিয়ে এবারের পর্যটন মৌসুমটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

Advertisement

হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, টানা বন্ধে অতীতেও প্রায় প্রতিটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান কম-বেশি পর্যটক পায়। বৃহস্পতিবার হতে চারদিনের ছুটিতেও তেমনটি হচ্ছে। টানা ছুটি কাজে লাগানোর কারণে দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বাড়বে কক্সবাজারে। এটা 'দমকা হাওয়ার' মতো। তবে এমন ব্যবসা দিয়ে পর্যটনে টিকে ধাকা কষ্টসাধ্য।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটকদের সেবা দিতে দরিয়ানগরের অর্ধসহস্রাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সরকারি ছুটির পরও শনিবার পর্যন্ত ভ্রমণপিয়াসীরা কক্সবাজার অবস্থান করবেন বলে আশা করছি। এ ক'দিনে লাখো পর্যটকের অবস্থানে সাতদিন টানা ব্যবসা জমলে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতে পারে।

ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। নিয়মিত ব্যবসা না থাকলে ঋণের উপর প্রতিষ্ঠান চালানো হাতিপোষার মতো। ২০১২ সাল হতে কোনো না কোনো কারণে ভর মৌসুমেও পর্যটক শূন্য সময় কাটাতে হচ্ছে। তবে, ভ্রমণপিয়াসীদের সেবা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত রয়েছি।

সেন্ডি বিচ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হলে চেনা রূপে ফিরবে কক্সবাজার।

Advertisement

হোটেল দি কক্স টু-ডের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, আমরা রেডি। পরিচ্ছন্ন আবহ-ই পাবেন পর্যটকরা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি।

হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, কক্সবাজার দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। এরপরও দীর্ঘ সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলায় কিছু পর্যটন স্পট থাকায় লোকজন আসেন। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করা দরকার।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক (ইনচার্জ) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরে পার্কটি আধুনিকায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট হামলায় অবকাঠামো ও নানা সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রকল্প ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে পর্যটক বরণে প্রস্তুত সাফারি পার্ক। টানা বন্ধে এখানে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সমাগম ঘটে। আগত দর্শণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, অনেকদিন পর উল্লেখ করার মতো পর্যটক বেড়াতে আসবে- সেটাই কাম্য। গড়ে ৫০-৮০ হাজার পর্যটক সপ্তাহখানেক সময় কক্সবাজার অবস্থান করলে পর্যটন অনুষঙ্গ সব সেক্টর মিলে সাড়ে ৩ থেকে ৪২০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাণিজ্য হতে পারে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বপালন করবে। সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও থাকবে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। থাকবে যৌথ টহল, প্রশাসনের মোবাইল টিম।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, সৈকতের প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের প্রসারই আমাদের মূল লক্ষ্য।

সায়ীদ আলমগীর/এএইচ/জিকেএস