ইসলামে কবর পাকা করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। নবিজি (সা.) কবর পাকা করতে, কবরে লিখতে, কবরের ওপর স্থাপনা নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। জাবের রা. বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর বাড়ি নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি)
Advertisement
ইসলামি আইনবিশারদগণের অধিকাংশের মতেই কবর পাকা করা মাকরুহ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কবর পাকা করাকে মাকরুহ মনে করতেন। ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) তার সঙ্কলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন, আমরা কবরকে চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা কবরের পাশে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোনো কিছু লেখা ইত্যাদি কাজ মাকরুহ মনে করি। (কিতাবুল আসার লিমুহাম্মদ: ২/১৯১)
আল্লাহর রাসুলের (সা.) ও সাহাবিদের যুগে কবর তো পাকা করা হতোই না বরং কবর অতিরিক্ত উঁচু করাও তারা অপছন্দ করতেন। ওপরে উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা যায় কবরে ফলক লাগিয়ে বড় বড় কবিতা, স্তুতিবাক্য, কবিতা, আয়াত বা হাদিসের বাণী লিখে রাখাও অপছন্দনীয়।
তবে কবর চেনার জন্য কোনো চিহ্ন দেওয়া যায় বা নামফলক লাগানো যায়; যেটাতে নাম-পরিচয় লেখা থাকবে। কবর চেনার প্রয়োজনে কবরে চিহ্ন দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। হাদিসে এসেছে, উসমান ইবন মাজউনের (রা.) ইনতেকালের পর তার জানাজা ও দাফন শেষে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের চিহ্ন রাখার জন্য জনৈক সাহাবিকে একখণ্ড পাথর আনার জন্য নির্দেশ দেন। তিনি সেটি বহন করতে পারছিলেন না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেটি নিজে আনার জন্য অগ্রসর হন এবং তার দুহাতের জামার আস্তিন গুটিয়ে ফেলেন এবং পাথরটি বয়ে নিয়ে এসে ওসমানের (রা.) শিয়রে রাখেন এবং বলেন, আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করলাম, আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে এই কবরের পাশে দাফন করবো। (সুনানে আবু দাউদ)
Advertisement
ওপরে উল্লিখিত হাদিসে কবর পদদলিত করতে নিষেধ করা হয়েছে। একইভাবে কবরের ওপর বসা, কবরের ওপর ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করা অথবা বসবাসের ঘরের নিচে কাউকে কবর দেওয়াও নিন্দনীয় কাজ। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের ওপর বসতে নিষেধ করে বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি আগুনের ফুলকির উপর বসে এবং তাতে তার পরিধেয় বস্ত্র পুড়ে গিয়ে ওই আগুন তার শরীরের চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায় এটা তার জন্য কবরের উপর বসার চেয়ে উত্তম। (সহিহ মুসলিম)
ওএফএফ/জিকেএস