জাতীয়

ঢাকায় ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম, ডেঙ্গুতে বাড়ছে মৃত্যু

• ঢাকার দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ, মেয়র পদে প্রশাসক নিয়োগ • কাউন্সিলররা না থাকায় আগের মতো মশক নিধন ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই• প্রতি মাসে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, ভয়ংকর রূপ নিতে পারে অক্টোবরে• বৃষ্টি কমলে এডিস মশা কমবে, নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে নিজ বাড়ির আঙিনা

Advertisement

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। কোনো ক্রমেই মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংস্থা দুটি। ফলে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সিটি করপোরেশন তার নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকে, তার মধ্যে মশক নিধন অন্যতম কাজ। কিন্তু এ কাজটিই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঠিকমতো করতে পারছে না এবং তারা এ কাজে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেন নাগরিকরা।

‘সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে, এ কথা আগেই বলেছিলাম। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।’-অধ্যাপক কবিরুল বাশার

Advertisement

তবে ভিন্ন কথা বলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির দাবি, এডিস মশা বাসাবাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। এর দায় নাগরিকদের সবচেয়ে বেশি। তাই মশা নিধনে নিজ বাড়ির আঙিনা নিজেকেই নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। আর বাইরে ড্রেন, নালা বা অন্য কোনো স্থানে মশা জন্মালে সিটি করপোরেশন তা নিধন করবে।

আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু

২০২৩ সালে ঢাকা শহরে এডিস ও কিউলেক্স মশার উপদ্রব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। গত বছর ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবেই লাখ ছাড়ায়। এ রোগে মারা গেছে দেড় হাজারের বেশি। চলতি বছরও প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর সারি।

আরও পড়ুন- ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১ ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, বাড়ছে শিশু মৃত্যুহার শয্যা সংকটে ফিরছে ডেঙ্গু রোগী, জটিলতা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১২২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি

কীটতত্ত্ববিদরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে যেখানেই বৃষ্টির পানি জমছে, সেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আবার এমন কিছু জায়গায় এডিস মশা প্রজনন করছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে রয়েছে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি। প্রত্যেককে নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে, এ কথা আগেই বলেছিলাম। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।’

Advertisement

‘একজন কাউন্সিলর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। এজন্য জনগণের কাছে তার কাজের জবাবদিহি করতে হয়। সে জায়গা থেকে এডিসের মৌসুমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মশার লার্ভা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন সেই চিত্র নেই। ফলে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।’-সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়ে গেলে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হয় উড়ন্ত মশা নিধনে। আমরা এখনো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। অক্টোবরে এটি আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

প্রতি মাসেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ৩৭ হাজার ৮০৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে ১৬ হাজার ২৯৮ জন ও এর বাইরে ভর্তি হয় ২১ হাজার ৫১০ জন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৮৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটিতে মারা গেছে ১২৯ জন ও ঢাকা মহানগরের বাইরে ৫৯ জন।

জুলাই মাসে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ৪৭৩ জন, মৃত্যু হয় একজনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ৬৭৬ জন, মৃত্যু হয় ছয়জনের।

আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৯২ জন, মৃত্যু হয় একজনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৯০৯ জন, মৃত্যু হয় ১৭ জনের।

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ১৮ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয় ৮০ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৯৭৭ জন, মৃত্যু হয় ১৫ জনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৭৮৫ জন, মৃত্যু হয় ৩৮ জনের।

‘জুরাইনের ড্রেন, নালায় এডিস মশা জন্মাচ্ছে। অনেক বাড়ির নিচ তলায় পরিত্যক্ত ফ্ল্যাটেও মশা জন্মাচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা তদারকি করছে না। ফলে ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।’-বাসিন্দা মিজানুর রহমান

চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সাতদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৮৭০ জন, মৃত্যু হয় ২৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৫৩৫ জন, মৃত্যু হয় চারজনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ১৭৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। অর্থাৎ প্রতি মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা।

ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির কারণ

বছরের আগের মাসগুলোর তুলনায় আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে হওয়া অতিবৃষ্টিকে ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টির পরিমাণ একেবারে কম ছিল না। আবার চলতি মাসেও স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে শিশুরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি ডেঙ্গুর ভয়াল রূপ সেপ্টেম্বরে, আট মাসের সমান মৃত্যু এক মাসে অক্টোবরে আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু ডেঙ্গুরোগী বেশি দক্ষিণ সিটিতে, ঢাকার বাইরে শীর্ষে চট্টগ্রাম

কবে নাগাদ ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে- জানতে চাইলে কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে এলে এক মাসের মধ্যেই সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে এ মুহূর্তে ডেঙ্গুর হটস্পট নির্ধারণ করে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

যে কারণে ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে শহরে মশক নিধন কর্মসূচি পালিত হতো। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দুই সিটির আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলররা। এর দুই দিন আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। পরে সব মেয়র ও কাউন্সিলরকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

‘আগে মশক নিধন কার্যক্রম মাঠে থেকে পরিদর্শন করতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। দিন-রাত সব সময় মশায় কামড়ায়।’- আজিমপুর বটতলার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন

১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তারা মেয়রের ক্ষমতা পেলেও আগের মতো মশক নিধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা না থাকায় ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।

উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আলাপকালে কামাল উদ্দিন বলেন, বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার মশার উপদ্রব বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনকে মশা মারতে দেখা যায় না। অথচ হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন- ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন এবারও ডেঙ্গুরোগীর বেশিরভাগ ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত দিনাজপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, সংকট স্যালাইনের কক্সবাজারে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু

মোহাম্মদপুরের আজম রোড, আসাদ এভিনিউ, রাজিয়া সুলতানা রোড, তাজমহল রোড, শের শাহ সুরি রোড, নূরজাহান রোড, জাকির হোসেন রোড ও শাহজাহান রোড এলাকা নিয়ে উত্তর সিটির ৩১ নম্বর ওয়ার্ড।

এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন কাউন্সিলর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। এজন্য জনগণের কাছে তার কাজের জবাবদিহি করতে হয়। সে জায়গা থেকে এডিসের মৌসুমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মশার লার্ভা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন সেই চিত্র নেই। ফলে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তালিকা অনুযায়ী, এখন জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মুগদা এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। প্রতিদিন এসব এলাকা থেকে শত শত মানুষ ডেঙ্গু চিকিৎসা নিতে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যাচ্ছেন।

মশা নিধনে কোনো কার্যক্রমই থেমে নেই। মশা নিধনের সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, শোভাযাত্রা এবং বাড়ি বাড়ি এডিস মশার প্রজননস্থল অনুসন্ধানের কাজ চলছে।- ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন

জুরাইন এলাকায় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জুরাইনে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। এখন তারা ডেঙ্গুতে বিপর্যস্ত। এ এলাকার প্রায় সব বাসাবাড়িতেই ডেঙ্গু হানা দিয়েছে। আমরা আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু চাই না।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুরাইনের ড্রেন, নালায় এডিস মশা জন্মাচ্ছে। অনেক বাড়ির নিচ তলায় পরিত্যক্ত ফ্ল্যাটেও মশা জন্মাচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তা তদারকি করছে না। ফলে ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।’

আজিমপুর, পলাশী ও রসুলবাগ এলাকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, আগে প্রতিদিন সকাল ৯টায় এই ওয়ার্ডের বনানী কার্যালয়ের সামনে থেকে মশক নিধনে বের হতেন মশককর্মীরা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তাদের আর তেমন দেখা যায় না। একদিন ওষুধ দিলে সাতদিন দেয় না।

৩ অক্টোবর সকাল ৯টায় এই কার্যালয়ের সামনে গিয়েও মশক কর্মীদের দেখা যায়নি।

আজিমপুর বটতলার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আগে মশক নিধন কার্যক্রম মাঠে থেকে পরিদর্শন করতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে মশক নিধন কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। দিন-রাত সব সময় মশায় কামড়ায়। মহল্লার অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুনেছি।’

২৬ নম্বর ওয়ার্ডসহ ডিএসসিসির ১২টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেন অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউর রহমান। তিনি দাবি করেন, ‘আগে কাউন্সিলররা যেভাবে মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতেন, এখন একইভাবে তা করা হচ্ছে। কাউন্সিলরা না থাকায় মশক নিধনে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। আর মশক নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধও সিটি করপোরেশনে মজুত রয়েছে।’

উত্তর সিটিতে তিনটি তদারকি টিম গঠন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দপ্তর সূত্র জানায়, আগে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা বা কর্মসূচি চালিয়েছে তারা। কিন্তু এবার সরকার পতনের পর তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু গত ১৯-২৬ সেপ্টেম্বর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারা।

উত্তর সিটির মশক নিধন অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও নিবিড় তদারকির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং ডিএনসিসির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে তিনটি তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুজন করে কর্মকর্তা রয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই তদারকি টিম মনিটরিং শুরু করেছে। এই তদারকি কার্যক্রম টানা দুই সপ্তাহ চলবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

মশক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ডিএসসিসি সব ওয়ার্ডে ক্রমান্বয়ে ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন’ কার্যক্রম তথা চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং নাগরিকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকালে লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম ও বিকেলে এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমও চলছে।-ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, মশা নিধনে তাদের কোনো কার্যক্রমই থেমে নেই। মশা নিধনের সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, শোভাযাত্রা এবং বাড়ি বাড়ি এডিস মশার প্রজননস্থল অনুসন্ধানের কাজ চলছে।

মকবুল হোসাইন জানান, তাদের সপ্তাহব্যাপী পরিচালিত বিশেষ কার্যক্রমে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮৬টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এসব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনার চেয়ে অ্যাকশনকে বেশি নজর দিচ্ছি সাধারণ উপসর্গের ডেঙ্গু রোগী বেশি, সুস্থ করা যাচ্ছে সহজে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে মশা মারতে কাজ করছেন ৩ হাজার কর্মী জনসচেতনতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে নিয়মিত জরিমানা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ৭৫টি ওয়ার্ডে সারা বছরই নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। এরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। নিয়মিত করা হচ্ছে জরিমানা।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জাগো নিউজকে বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে দৈনন্দিন নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি সব ওয়ার্ডে ক্রমান্বয়ে ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন’ কার্যক্রম তথা চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং নাগরিকদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকালে লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম ও বিকেলে এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমও চলছে।

এমএমএ/এমএমএআর/এএসএম