আজ থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। চলবে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এবছর সারাদেশে দুর্গাপূজায় মন্ডপের সম্ভাব্য সংখ্যা ৩২ হাজার ৬৬৬টি। গত বছর মোট পূজা মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৪৩১। গত বছরের চেয়ে পূজা কমেছে সেটা বড় বিষয় না কারণ নিজেদের জটিলতার কারণে সেটা বন্ধ হতে পারে। কেউতো ঘটা করে বলে নি পূজা করতে কেউ বাধা দিয়েছে সুতরাং এটা স্বাভাবকি। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবটি নির্বিঘ্নে হবে কি না তা নিয়ে মনে হয় দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ সবসময় বলির পাঠা হয় এই ধর্মাবলম্বীরা। নিজেদের সংখ্যালঘু বলে দাবি করতে পারি না বা পারব না আবার সংখ্যাগরিষ্ঠের চাপে নিজেদের অসহায় না ভেবে পারে নি কিছু সময় কিছু ঘটনায়। তবে কি পূজা নির্বিঘ্নে হবে না এমনটাও সঠিক হয়। পূজাকে নির্বিঘ্নে করতে হবে এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে মূল কথা এইটা। কারণ এটা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সার্বজনীন উৎসব।
Advertisement
এবারের দুর্গা পূজা উদযাপন উপলক্ষে পূজামন্ডপগুলোর নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে পূজামন্ডপ নির্মাণকালে নিরাপত্তা ও পূজামন্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পূজামন্ডপগুলোতে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিস ও থানা থেকে মনিটরিং করা হবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ বিশেষ টিম গঠন করা হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থানে শারদীয় দুর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাবের টহল নিশ্চিত করা হবে। দুর্গা পূজা চলাকালীন পূজামন্ডপ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হবে। পূজা উদযাপনকালে প্রতিটি পূজামন্ডপে আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রাখা হবে।
স্বাধীন ও সভ্য জাতি হিসেবে সকলের ধর্ম যদি আমরা নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির সাথে পালন করতে পারি তবেই সার্থক হবে দেশের ভাবমূর্তি। তবে গুজব ও ফেসবুকের মিথ্যা তথ্য দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। দেশের স্বার্থে শারদীয় উৎসবে অশুভ তৎপরতা রোধে কঠোর থাকতে হবে উৎসব উদযাপন কমিটি ও রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকলকে।
Advertisement
পূজামন্ডপে অগ্নিকান্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের ডুবুরি দলকে প্রস্তুত রাখা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন নির্ধারিত স্থানে বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেক পূজামন্ডপে স্থানীয় প্রশাসন, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বর, মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হবে। পূজামন্ডপে আগত শিশু ও নারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
পূজামন্ডপের আশেপাশের ডাস্টবিন, রাস্তা, ড্রেন, নালা, পুকুর এবং প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ব্যবহৃত রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামত করা। আজান ও নামাজের সময়ে মসজিদের পার্শ্ববর্তী পূজামন্ডপগুলোতে পূজা চলাকালে এবং বিসর্জনকালে শব্দ যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখা ও উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হবে। যেখানে ছাত্র সমন্বয়কদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন, সেখানে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সকল রাজনৈতিক দলই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা দেওয়া কথা অতীতে বলছে, বর্তমানে বলছে এবং ভবিষ্যতেও বলবে জানি। তারপরও যারা হামলা করে তারা আসলে কারা এর মুখোমুখি কি হতে পেরেছি, হয়ত পারি নাই তাই জানিও না ওরা কারা? এর তৎপরতার পরও খুলনার দাকোপের তিন মন্দিরে দুর্গাপূজা করতে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে- সম্প্রতি এমন বেনামি চিঠি পাওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছে পুলিশে। ১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুটি মন্দিরের নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আরও কিছু জায়গাতে এমনটা ঘটছে যা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে।
দুর্গা নামের বুৎপত্তিগত অর্থ যিনি দুর্গ অর্থাৎ সঙ্কট হতে ত্রাণ করেন। শাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটির একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ‘দুর্গা’র ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, ‘উ-কার’ ( ু ) বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ (র্ ) রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও ‘আ-কার’ ( া ) ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
Advertisement
সুতরাং ধর্ম ও নিজেদের ধারণ করার জায়গা থেকে উৎসবটি হয়ে থাকে। স্বাধীন ও সভ্য জাতি হিসেবে সকলের ধর্ম যদি আমরা নিরাপত্তা ও সম্প্রীতির সাথে পালন করতে পারি তবেই সার্থক হবে দেশের ভাবমূর্তি। তবে গুজব ও ফেসবুকের মিথ্যা তথ্য দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। দেশের স্বার্থে শারদীয় উৎসবে অশুভ তৎপরতা রোধে কঠোর থাকতে হবে উৎসব উদযাপন কমিটি ও রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকলকে।
লেখকঃ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
এইচআর/এএসএম