ছোটবেলা থেকেই সংসার এবং বোনদের লেখাপড়ার খরচ কাঁধে নিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন (২২)। কেননা তার বাবার মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেই পারভেজকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন মা ফাতেমা বেগম। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান লক্ষ্মীপুরের সন্তান পারভেজ হোসেন।
Advertisement
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) নিহত পারভেজের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘অভাবের কারণে পারভেজ চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর ১২ বছর বয়সে সে ঢাকায় কাজের সন্ধানে যায়। এরপর ছেলেই সংসারের হাল ধরেছে। এখন হাল ধরার মতো কেউ নেই। আমাদের কী হবে?’
পারভেজ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের নবী উল্যাহ ও ফাতেমা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। ছোট টিনশেড ঘরে তাদের বসবাস।
৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পারভেজের মাথায় গুলি লাগে। এরপর এক মাস ৮ দিন চিকিৎসাধীন থেকে ১২ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মারা যান। মিরপুর ১০ নম্বরে সেনপাড়া থাই গ্লাসের দোকানে কাজ করতেন পারভেজ।
Advertisement
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে স্ত্রী রুপা আক্তারকে নিয়ে পারভেজ ভাড়া বাসায় থাকতো। আন্দোলনের সময় দোকান বন্ধ ছিল। আমার বাসায় খাবার ছিল না। এজন্য তাকে বলেছি, ঘরে চাল নেই, না খেয়েই মারা যাবো মনে হচ্ছিল। তাকে চলে আসতে বলি। কিন্তু সে আর আসেনি। তার লাশ এসেছে বাড়িতে। এ ঘটনার পর পারভেজের স্ত্রী বাবার বাড়ি পাবনায় চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন এক ডাক্তার ফোন দিয়ে বলেন, মোবাইলের মালিক কে হয় ? আমি বলেছি, ছেলে। তখন তিনি বলেন, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, আমার ছেলে কথা বলতে পারে না।’
কথা হয় পারভেজের চাচাতো ভাই আরাফাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পারভেজই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। আমার কাছেই বাাড়ির জন্য সবসময় টাকা পাঠাতো।’
ছেলের শোকে কাতর বাবা নবী উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘ছেলে হঠাৎ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। তার জন্য মন কাঁদে। কোরবানের ঈদের সময় বাড়িতে আসেনি। বাড়িতে থাকলে আর ছেলেটা এভাবে মারা যেতো না।’
Advertisement
পারভেজরা পাঁচ ভাই-বোন। এরমধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। বছরখানেক আগে এক বোনকে এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তার অবিবাহিত এক বোন ও ছোট দুই ভাই রয়েছে।
কাজল কায়েস/এসআর/এমএস