টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন।
Advertisement
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নারী-শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তিন উপজেলায় ৬৩ টন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ধোবাউড়া বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উজানের পানি নেমে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। চারদিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ।
Advertisement
উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ধোবাউড়া সদর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের কুলসুম আক্তার বলেন, চারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। বাড়ির উঠান ও চারপাশে হাঁটুপানির কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না। হাঁস-মুরগিগুলো মরে গেছে। কেউ একটু সহযোগিতাও করেনি।
ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বরও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার।
সিংহেশ্বর গ্রামের রুহুল কাজী বলেন, রোববার বিকেলে আমাদের এলাকায় পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ বাড়ে। ধান তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ দেখছি না।
Advertisement
এদিকে হালুয়াঘাটের প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন মানুষজন।
আমতৈল গ্রামের সুরুজ আলী বলেন, গত শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হলেও পানি কমার কোনো লক্ষ্মণ দেখছি না। কদিন ধরে বাল বাচ্চা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, সোমবার নতুন করে উপজেলার দুই ইউনিয়নের ২৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
হালুয়াঘাট উপজেলার ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজানে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।
মঞ্জুরুল ইসলাম/আরএইচ/এমএস