কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। গোমতী নদীর ভাঙনকবলিত এলাকায় ঘরবাড়ি হারানো মানুষরা দিনাতিপাত করছেন অতিকষ্টে।
Advertisement
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সূত্রমতে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পুনর্বাসনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
গত ২০ আগস্ট থেকেই বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময় যতো গড়ায় বন্যার ভয়াবহতাও ততোই বাড়ে। ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর একে একে ১৪ উপজেলায়ই প্লাবিত হয়। বেশ কিছুদিন উপজেলাগুলো পানিবন্দি অবস্থায় থাকার পর বন্যার পানি কমলেও মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়। অনেক মানুষ এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহায়তা পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। এসব মানুষকে পুনবার্সিত করতে হলে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সূত্র মতে, এবারের বন্যায় জেলার ১৪ উপজেলার ৮ হাজার ৬৭৪টি পাকা/ আধাপাকা এবং কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর। এসব ঘর পুননির্মাণে ১ হাজার ৮৪ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ব্রিজ কালভার্ট, সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে চাহিদা পাঠানো হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা, শস্যক্ষেত ও বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি খাতে চাহিদা পাঠানো হয়েছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, মৎস্য খাতে ৭৮ কোটি ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৫শ টাকা, সওজের সড়ক সংস্কারে ৫৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, এলজিইডির সড়ক সংস্কারে ৭৪৪ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার টাকা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নলকূপ, ল্যাট্রিনের জন্য ৩৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৩৭ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৫৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৩১ হাজার ২শ টাকা, মাধ্যমিক শিক্ষার স্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১ কোটি ৪১ লাখ টাকা, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা, বন অধিদপ্তরের ৭ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৫ টাকা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২৫২৯ কোটি ৮১ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৫ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, এরইমধ্যে আমরা বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে দপ্তর অনুযায়ী সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছি। সে অনুসারে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, কুমিল্লা জেলায় এবারের বন্যায় প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির বিষয়ে আমরা এরইমধ্যে মন্ত্রণালয়ে গৃহনির্মাণ খাতে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এরমধ্যে তাবু চেয়েছি ৮ হাজার পিস এবং ঢেউটিন চেয়েছি এক লাখ ৯১ হাজার বান্ডেল। আশা করছি মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চাহিদার সরঞ্জামগুলো পেয়ে যাবো। আর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হবে।
জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জিকেএস
Advertisement