গাইবান্ধা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল উত্তোলনে দলিল প্রতি ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় এতদিন চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ১৫-২০ দিন দলিল প্রতি ২৫০- ৩০০ টাকা নেওয়া হয়। পরবর্তী নকলনবিশ সমিতির নামে জোরপূর্বক সরকারি ফিয়ের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
Advertisement
প্রতিদিন গড়ে গাইবান্ধা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ১০০ এর ওপরে দলিলের জাবেদা বা নকল উত্তোলন করা হয়। এজন্য দলিলের পাতা প্রতি সরকারি ফি ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এই সমিতি তা মানছে না। নকলনবিশদের দাবি, সমিতি প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ (দলিলের জাবেদা লেখক) মো. আলিফ মিয়া বলেন, জেলার কোনো অফিসে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি না চললেও এই অফিসে আওয়ামী লীগের লোকজন সমিতির নামে আমাদের কাছ থেকে সরকারি ফির চেয়ে দ্বিগুণ টাকা নিচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই অফিস আওয়ামী লীগ রাজত্ব করে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই হুমকিসহ হয়রানি করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী নকলনবিশ রাহান মিয়া বলেন, গত দুদিন সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় সমিতির সভাপতি শিউলী বেগম আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। কীভাবে এই অফিসে মহুরি করি, উনি দেখে নেবেন- এভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
Advertisement
আরেক ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম সঞ্জু বলেন, জেলা রেজিস্ট্রির শুধু সরকারি ফি নিতে বললেও সভাপতি শেউলী বেগম আর সাধারণ সম্পাদক শরিফ কোনো কিছুই মানছেন না। তারা বলেন, ‘টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছি। এখানে কারো কোনো ক্ষমতা নেই। সমিতির নিয়ম মেনেই সব নকলনবিশদের চলতে হবে।’
ক্যাশিয়ার আমিনুল ইসলামের কাছে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন।
নকলনবিশ সমিতির সভাপতি মোছা. শেউলী বেগম বলেন, আমি কাউকে কোনো হুমকি দেই নাই। আগে থেকেই যা নেওয়া হয়েছিল তাই নিচ্ছি। তবে ৫ আগস্টের পর ১৫-২০ দিন ২৫০- ৩০০ টাকা করে নিয়েছি দলিলপ্রতি। ওই কয়দিন ছাত্রদের ভয়ে এ কাজ করেছি। এই সমিতিকে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। কারো মেয়ের বিয়ে, মানুষ মারা গেলে, কেউ অসুস্থ হলে, সাংবাদিকসহ অনেক জায়গায়। এগুলো কি আমি ঘর থেকে এনে দেবো? আর আমরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি। নকলনবিশদের সমিতির নিয়ম মানতে তো হবে।
গাইবান্ধা জেলা রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। সেটা সমিতি বা অফিসের কেউ হোক। সরকারি অফিস কোনো সমিতির নিয়ম মেনে চলে না। সমিতির নামে কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
আনোয়ার হোসেন শামীম/জেডএইচ/জেআইএম