বর্তমান যুগে প্রযুক্তির প্রভাব আমাদের জীবনকে পাল্টে দিয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপের প্রতি আকর্ষণ শিশুদের মনোযোগকে বিভ্রান্ত করে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তাই আমাদের প্রজন্মের শিশুদের স্বাস্থ্যকর ও সুখময় ভবিষ্যতের জন্য তাদের খেলাধুলার মাধ্যমে বড় হওয়া অপরিহার্য।
Advertisement
বিশেষ করে করোনাকালীন শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বেশিরভাগ শিশু। এছাড়া বাবা-মা চাকরিজীবী হওয়ার কারণে কিংবা সন্তানকে ব্যস্ত রাখতে অনেকেই মোবাইল ফোন বা ট্যাব হাতে ধরিয়ে দেন। যা শিশুর জন্য ভয়ংকর এক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশের ৯৫ শতাংশ শিশুই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় ভুগছে। ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় কাটালে তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল ডিমেনশিয়াকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে-স্ক্রিনে অতিরিক্ত টাইম দেওয়ার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয় যেমন-আচরণে পরিবর্তন, দুর্বল স্মৃতিশক্তি, ফোকাস করতে অক্ষমতা, আগ্রাসী আচরণ, বিরক্তিভাব, দুর্বল সামাজিক দক্ষতা, ক্লান্তি এবং কম ঘুম ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।
আরও পড়ুন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের জন্য আজকের দিনটিগবেষণায় আরও দেখা যায়, বর্তমানে শিশুদের একটি ডিভাইস ব্যবহার করার গড় সময় দিনে ৭.৫ ঘণ্টা। কিছু কিছু কিশোরের ক্ষেত্রে এটি দিনে ৮-১২ ঘণ্টাও হয়ে যায়। আর ফোনের অত্যধিক ব্যবহার এবং তার ওপর নির্ভরশীল এসব বাচ্চারাই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার শিকার হচ্ছে।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের জন্য স্ক্রিন টাইম কমিয়ে খেলার সুযোগ বাড়ানো উচিত। এটি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খেলার মাধ্যমে তারা শেখে প্রতিযোগিতা এবং সাফল্য, পাশাপাশি ব্যর্থতাও গ্রহণ করতে।
খেলা শুধু বিনোদন নয়, এটি শিশুদের শারীরিক ও সামাজিক দক্ষতা বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা যেমন দৌড়, ফুটবল, ক্রিকেট, কিংবা খেলনা নিয়ে খেলা, শিশুকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখে। এটি শিশুদের শক্তি, স্থিতা শক্তি এবং টিমওয়ার্কের অভিজ্ঞতা দেয়। খেলার মাধ্যমে তারা শিখে যায় কীভাবে অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয় এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।
এছাড়া খেলাধুলা শিশুদের সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যখন শিশুদের জন্য মুক্ত পরিবেশে খেলার সুযোগ থাকে, তারা নতুন নতুন কল্পনাপ্রসূত পরিস্থিতি তৈরি করে, যা তাদের মানসিক বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক। এতে শিশুদের সামাজিক ও যোগাযোগের দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়, যা পরবর্তী জীবনে তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, শিশুদের দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক কার্যকলাপ করা উচিত। এখন অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শিশুদের প্রযুক্তির মোহ থেকে দূরে রেখে তাদের মুক্ত খেলার পরিবেশ তৈরি করা। শিশুদের প্রকৃতির মাঝে খেলার সুযোগ করে দেওয়া এবং বাইরে গিয়ে খেলতে উৎসাহিত করা।
Advertisement
বাবা-মার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষকদের শিশুদের খেলার প্রতি উৎসাহিত করবেন। শিশুদের খেলার মাধ্যমে বড় হতে দিতে পারলে, তারা একদিকে যেমন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে, অন্যদিকে একটি সুন্দর ও আনন্দময় ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
আরও পড়ুন প্রাণী শুধু নাম নয়, আছে অনুভূতি ও জীবন আজ মন প্রাণ খুলে হাসুনকেএসকে/জিকেএস