ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পরও এখনো কোথায় যেন ‘ভীতি ও আস্থাহীনতা’ কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
Advertisement
তিনি বলেছেন, আমরা দেখেছি বিগত সময়ে সচিবরা কীভাবে ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন এবং ব্যবসায়ীরা কেমন করে রাজনীতিবিদ হয়ে গেলেন। অনেকে মনে করেন, শুধু ব্যবসায়ীরাই রাজনীতিবিদ হননি, রাজনীতিবিদরাও ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। এখন কোনটা বেশি, কোনটা কম সেটি দেখার ব্যাপার।
শনিবার (৫ অক্টোম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামে হোটেল পেনিনসুলায় আয়োজিত বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির জনশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জনশুনানিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় বক্তারা নাগরিক সেবার ভোগান্তি, জনসম্পৃক্ততা ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়ন, নাগরিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুস বাণিজ্য, আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ, পর্যটন খাতে অভিঘাত, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ আমলে করা সব চুক্তির মূল কাগজ খতিয়ে দেখা হবেড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে যার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে গিয়ে অন্য অনৈতিক সুবিধা নিয়ে গেছেন। এত পরিবর্তনের পরও কোথায় যেন একটি ভীতি ও আস্থাহীনতা কাজ করছে। আমরা পুরোনো সিন্ডিকেটের বদলে নতুন সিন্ডিকেট চাই না। আমরা শুধু রাজনীতির বদল করলাম না, রাজার বদল করলাম, এটাতো হতে পারে না।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের যে পরিবর্তনের চিন্তা, সংস্কারের চিন্তা এটা হলো সেটিই। আমরা এক অত্যাচারীর বদলে আরেক অত্যাচারীকে বিকল্প হিসেবে দেখছি না।
উপস্থিত মতপ্রকাশকারীদের বক্তব্য উদ্বৃত করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যাদের আইন প্রণয়নের কথা তারা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যাদের আইনের সুরক্ষা দেওয়ার কথা তারাও যুক্ত হয়ে গেছে। যারা আইনকে প্রয়োগের কথা তারা যুক্ত হয়ে গেছে। এমনকি যারা উর্দি পরেন তারাও যুক্ত হয়ে গেছেন। এটি দিয়ে বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে আমরা যে সমস্যার মোকাবিলা করছি তার আয়তন, তার ব্যাপ্তি কত ব্যাপক এবং গভীর।
Advertisement
তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেউ আমাদের জন্য করে দিয়ে যাবে, এটা হবে না। আমাদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে নাগরিক অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এটার জন্য একদিকে যেমন নির্বাচন একটি পদক্ষেপ, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত নাগরিক সুবিধা এবং আমাদের প্রাপ্যটা বুঝে নেওয়ার সুযোগ।
তিনি আরও বলেন, এ সুযোগ যদি আমরা হারাই আবার যে কোনোদিন পাবো কি না এটা আমি জানি না। আমরা সব শ্রেণির মানুষের মতামত নিয়ে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী শ্বেতপত্র প্রণয়ন করতে চাই। যেটি এদেশের আপামর মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন
জনগণের সুপারিশ জানতে চেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিজনশুনানিতে শ্বেতপত্র প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) সিইও ফেরদৌস আর বেগম, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স ডেভেলপমেন্ট নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, সিপিডি ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে গত ২৮ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটির ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হন্তান্তর করার কথা রয়েছে।
এমডিআইএইচ/এমকেআর