লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মাতাব্বরহাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ কেটে ও ব্লক সরিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ট্রাক্টর চলাচলের জন্য রাস্তাসহ দুটি অস্থায়ী জেটি স্থাপন করছে তারা। এতে মাটি সরে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধ ঘেঁষেই রয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্লক নির্মাণের কারখানা। নদীর অন্যান্য এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে তারা পাঁচটি প্যাকেজের ১৫টি লটে কাজ করছে। এতে সেসব স্থানে ব্লক নিতে নদীপথ ব্যবহারের জন্য বাঁধ কেটে ট্রাক্টর চলাচলের রাস্তা করছে। এছাড়া ব্লক সরিয়ে দুটি অস্থায়ী জেটি স্থাপন করে। বাঁধ কেটে স্থাপন করা একটি জেটিতে ভেকু মেশিন রেখে ট্রাক্টরের ওপর থেকে ব্লকগুলো নৌযানে উঠাতে দেখা যায়। এছাড়া মাটি কাটা দুটি স্থানেই বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। মাটি ও ব্লক সরিয়ে রাস্তা-জেটি নির্মাণে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়রা তখন আন্দোলন করেছিল। পরবর্তীতে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার দেড় বছরের মধ্যে নদীর তীব্র স্রোতের কারণে বাঁধটিতে অন্তত ১০ বার ধস নামে। সবশেষ ঘূর্ণিঝড় রিমালে বাঁধের দক্ষিণ-পূর্বাংশও ধসে পড়ে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাতাব্বরহাট বাজারের তিন ব্যবসায়ী জানান, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছিল। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডও কোম্পানির দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এতে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তারা বাঁধটি কেটে নিজের সুবিধায় দুটি জেটি স্থাপন করেছে। তারা এখান থেকে কয়েক বছর পর চলে যাবে। কিন্তু তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি এ উপকূলের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠবে।
Advertisement
ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. বোরহান বলেন, মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজে লুধুয়া, পাটওয়ারির হাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কাজ চলমান। সেসব স্থানে ব্লক নেওয়ার জন্য বাঁধ কেটে ট্রাক্টরের জন্য রাস্তা করা হয়েছে। এছাড়া বাঁধের ব্লক সরিয়ে দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিখিত কোনো অনুমোদন নেইনি। বাঁধটির কোনো ক্ষতি হবে না আশা করছি। আমাদের কাজ শেষে পুনরায় বাঁধ ঠিক করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধটিতে এরই মধ্যে কয়েকবার ধস নেমেছে। এরপর আমরা তা ঠিক করে দিয়েছে। আমাদের কারখানার স্বার্থেই তা ঠিক করা হয়েছে।
তবে কোনোভাবে বাঁধ কাটা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি নীরব ছিলেন।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বেড়িবাঁধ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। বাঁধের দায়িত্ব পুরোটাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা আমাদের কিছু জানায়নি। বাঁধের ওপর একটি গাছ রোপণ করতে হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়। তারা যদি আমাদের বিষয়টি অবহিত করতেন, অবশ্যই আমরা সহযোগিতা করতাম। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবো।
Advertisement
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খাঁন বলেন, ঘটনা কি তা বিস্তারিত কিছু জানি না। উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে, পরে উত্তর দিচ্ছি।
কাজল কায়েস/জেডএইচ/এএসএম