বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহী তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ডেঙ্গু এবং মশাবাহিত অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধে বৈশ্বিক পরিকল্পনা ঘোষণা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, এখনও এটি স্থানীয় পর্যায়ে থাকলেও আক্রান্ত-মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বাড়ছে। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মশাবাহিত অপর দুই রোগ জিকা এবং চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের মাধ্যমে আর্বোভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক।
গেব্রিয়েসুস বলেন, গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ডেঙ্গু ও আর্বোভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং এখন এসব রোগে আক্রান্ত-মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। এই ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৩১৭ জন ডেঙ্গু টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় বড় বাধা ‘অর্থ সংকট’ ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০২২আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাটির এই মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যাপারটির সঙ্গে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে শুরু করে এই রোগে আক্রান্তদের সঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবারই সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিকসহ বিভিন্ন কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা শত শত কোটি মানুষের সুরক্ষা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্যই ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে হবে।
এ সময় অপরিকল্পিত নগরায়ন, দূষিত পানি, ত্রুটিযুক্ত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রভৃতিকে ডেঙ্গুর বিস্তারের জন্য সরাসরি দায়ী করেন সংস্থাটির গ্রীষ্মকালীন রোগ বিভাগের প্রধান এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. রমন ভেলাইউধান।
ডব্লিউএইচও’র রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২৩ লাখ মানুষ এবং তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি জনের।
Advertisement
পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার জলবায়ু ডেঙ্গু ভাইরাস এবং এর বাহক এডিস মশার বিস্তারের জন্য উপযোগী। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বিভিন্ন দেশ এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে তাই বরাবরই এই রোগের বিস্তার ছিল। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছরই নতুন নতুন দেশে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু।
বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে সদ্যোজাত শিশু এবং বয়স্ক লোকজন। যেহেতু ডেঙ্গু এখন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, তাই সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যক্রমেই একে মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকরী পথ বলে দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
এএএম/এমআরএম/এমএস