বাংলাদেশের অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনের প্রথম হিন্দি ছবি ‘খুফিয়া’। গত বছরের আজকের দিনে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। ঢাকার তিন অভিনেত্রী দাবি করেছিলেন, এ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ছিল তাদেরও। তবে বিশেষ কারণে ছবিটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তারা। সেসময় ওই প্রত্যাখ্যান যতটা হইচই ফেলেছিল, ছবিটি মুক্তির পর ততটা হইচই হয়নি। অর্থাৎ ছবিটি ভারত তো নয়ই, বাংলাদেশের দর্শকদেরও অতটা স্পর্শ করেনি। কী এমন ছিল ছবিতে, কেন ছাড়লেন ঢাকার অভিনেত্রীরা? কেনই বা ছবিটি করেছিলেন বাঁধন? বাঁধনের প্রথম হিন্দি সিনেমা মুক্তির বর্ষপূর্তিতে আলোচনা করা যাক ‘খুফিয়া’ নিয়ে।
Advertisement
‘খুফিয়া’কে কি হিট ছবি বলা যায়? বলিউড মুভি রিভিউজ বলছে ৩৮ হাজারবার দেখা হয়েছে ছবিটি। অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছেন দর্শক। প্রথম সপ্তাহে যদি ছবিটি ৪০ লাখবার দেখা হতো, তবে একে বলা যেত গড়পড়তা দেখা। আর ৭০ লাখবার দেখা হলে ছবিকে বলা যেত হিট। সেই বিবেচনায় খুফিয়া একটি ফ্লপ ছবি। বানিয়েছেন বিশাল ভরদ্বাজ। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন টাবু, শাতাফ ফিগার, আশিষ বিদ্যার্থী, আলি ফজল, ওয়ামিকা গ্যাবি প্রমুখ। আইএমডিবি ছবিটিকে নম্বর দিয়েছিল দশে ৬ দশমিক দশ, আর রটেন টমেটোস দিয়েছিল একশোতে ৫৯।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা অমর ভূষণের লেখা বই ‘এসকেপ টু নোহয়্যার’-এর নির্যাস থেকে করা হয়েছে খুফিয়া। স্পাই থ্রিলার ‘খুফিয়া’য় দেখা গেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে শংকিত হয়ে নিজেদের স্বার্থে কিছু অপারেশন চালায়। সে রকম এক অপারেশনে গল্পের মূল চরিত্র র এজেন্ট কেএম বা কৃষ্ণা মেহরার (টাবু) সঙ্গে পরিচয় হয় বাংলাদেশের লোকাল ইনফরমার হিনার (বাঁধন)।
গল্পে দেখা যায় বাঁধন স্বেচ্ছায় দূতাবাসের ভেতর গিয়ে হাস্যকর সব তথ্য দিয়ে র-এর চর হওয়ার চেষ্টা করছেন। এত সহজে বিশ্বের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে কাজ পাওয়া যায় দেখে অনেকেই হয়তো আগ্রহী হয়ে উঠবেন! তার ওপর বাংলাদেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে কীভাবে বাঁধন এত তথ্য পেয়েছেন, তা আর ছবিতে দেখানো হয়নি।
Advertisement
গল্পে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয় ২০০১ সালের আগের ঘটনা। ২০০৪ সালে সেসব নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বাংলাদেশে তখন সক্রিয় একাত্তরের ‘স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী’। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের সহযোগিতায় তারা ক্ষমতায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেখানো হয়েছে, তাদের পরোক্ষ মদদে সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন, যারা কি না পরে দেশব্যাপী বোমা হামলা চালিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে পাশের দেশ হিসেবে ভারত ছিল উদ্বিগ্ন। সেসময় র এজেন্টরা পরিবর্তনশীল বাংলাদেশের রাজনীতির প্রভাব মোকাবেলায় তৈরি হচ্ছে। ঘটনাক্রমে স্থানীয় এক চরের পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে সৃষ্টি হয় জটিলতা। চরের পরিচয় কীভাবে ফাঁস হল, তা দেখানোর সময় পরিচালক কিন্তু বাংলাদেশি কাউকে ব্যবহার করেননি। স্বয়ং ভারতীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের গুপ্তচরের পরিচয় মার্কিনিদের কাছে প্রকাশ করে দিচ্ছেন। এ দৃশ্য যেন শক্তিশালী রাজনৈতিক এক বার্তা। গল্পে এসব দেখাতে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার-জোটের মাঝে যে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী ছিল, তাদের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন বাংলাদেশি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে মূল খলনায়ক বানিয়ে পুরো গল্প এগিয়েছে।
খুফিয়া মুক্তির পর মৃদ্যু হইচই হয়েছিল দুজন নারীর সমপ্রেমী সম্পর্ক দেখানোর জন্য। এমনকি গত সেপ্টেম্বর মাসেও আরেক দফা মৃদ্যু হইচই হয়েছে এ নিয়ে। সে বিষয়ে অবশ্য চাঁছাছোলা জবাবও বাঁধনকে দিতে দেখা গেছে। যদিও ছবির গল্পের আড়ালেও গল্প ছিল। দেখানো হয়েছে, একজন অভাবী মেয়ে কীভাবে নিজের অসুস্থ বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে দেশের তথ্য বিক্রি করতে গিয়ে খুন হলো।
কেন ছেড়েছিলেন অন্যরা? এসব রাজনৈতিক বয়ানের উপস্থাপক হতে চাননি বলে? বিদ্যা সিনহা মিম বলেছিলেন, ‘গল্পটি পড়ার পর দেখি, এটা পলিটিক্যাল জনরার গল্প। গল্পে বাংলাদেশকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং আরও কিছু বিষয়ে সঠিকভাবে না জেনে গল্পটি তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু ভেবে মনে হয়েছে, এ ধরনের ভুল উপস্থাপনের কোনো কিছুতে আমার যুক্ত হওয়াটা ঠিক হবে না। আমার পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে তারাও একই মত দেন। এরপর বিনয়ের সঙ্গে আমি তাদের না করে দিই।’ মেহজাবীন বলেছিলেন, ‘আমাকে সিনোপসিস দেওয়া হয়। পড়ার পর বুঝতে পারি, এটি পলিটিক্যাল জনরার গল্প। এই গল্পে বাংলাদেশের এমন কিছু রাজনৈতিক ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এ ধরনের কোনো গল্পে নিজেকে জড়াতে চাইনি বলেই না করে দিয়েছি।’ শোনা গেছে ছোটপর্দার অভিনেত্রী সালহা খানম নাদিয়াকেও ছবির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেসময় গণমাধ্যমে নাদিয়া বলেছিলেন, ‘নিজের মধ্যে রেসট্রিকশন তৈরি হয়েছিল। চিত্রনাট্য পড়েছি, সবকিছুই মোটামুটি। তবে বাংলাদেশকে ছোট করা হয়েছে। তাছাড়া চরিত্রটাও বোল্ড। এটার জন্য সাহস লাগবে। চরিত্রটার জন্য আমি প্রস্তুত না। এর চেয়ে বেটার কাউকে নেন।’ বাঁধন কেন রাজি হলেন? খবর বের হওয়ার পর বাঁধন বলেন, ‘আমি শুধু পরিচালক আর চরিত্র দেখে চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। কেন্দ্রীয় চরিত্র না হলেও চরিত্রটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রথমত পরিচালক, এরপর চরিত্র। আমার কাছে চরিত্র বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, আমি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমার বয়স, অভিনয়ের ক্যারিয়ার—সব মিলিয়ে যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে নিজেকে এক্সপ্লোর করতে চাই। এ রকম একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করাটাও কিন্তু বড় ব্যাপার, কারণ তিনি নিজেই একটা ইনস্টিটিউট। তার সান্নিধ্যে আমার একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতাও হলো। এখানে কীভাবে কাজ হয়, সেটিও জানা হলো। ওটাও আমাকে অন্যভাবে সমৃদ্ধ করবে। পরে যদি অন্য কোনো কাজ করি, তখন এই অভিজ্ঞতা আমার কাজে আসবে।’
আরএমডি/এমএস
Advertisement