আচমকাই ইসরায়েলের আকাশপথে ছুটে এলো ইরানের ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র। এই হামলার পরই পুরোদস্তুর দামামা বেজে গেছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের! ইরানের দাবি, অন্তত ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এরপরই মূলত প্রশ্ন উঠেছে ইসরায়েলের বিখ্যাত ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ দেশটির সার্বিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে।
Advertisement
ইসরায়েলে এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতদূর শত্রুর হামলা ঠেকাতে সক্ষম, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। একদিকে চীন, অন্যদিকে পাকিস্তান- দুই প্রতিবেশী দেশের হামলার আশঙ্কা সব সময়ই রয়েছে। সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি ‘শত্রু’র ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখতে সক্ষম হবে?
ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো প্রযুক্তি ভারতের কাছেও আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধান এপি সিং। তিনি বলেন, আমরা যাই-ই কিনি না কেন, আমাদের কাছেও আয়রন ডোমের মতো ব্য়বস্থা আছে ৷ কিন্তু তা সারা দেশের জন্য যথেষ্ট নয় ৷ আমাদের আরও অনেক কিছু দরকার। কী কী প্রয়োজন, তাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে ৷ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ও যুদ্ধবিমান ভারতেই তৈরি করতে হবে ৷ এই বিষয়ে আমরা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) সঙ্গে কাজ করছি৷
বলে রাখা ভালো, এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে হাইপারসনিক অর্থাৎ শব্দের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে শীর্ষে রয়েছে চীন। যার মধ্যে অন্যতম ডিএফ-১৭। মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে যেখানে রয়েছে হাইপারসনিক যান, যা ১৬০০ কিমি দূরেও লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। এছাড়া আলোচনায় উঠে আসে ডিএফ- ২১ ও ডিএফ- ২৬ এর কথাও। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি যুদ্ধজাহাজ গুঁড়িয়ে দিতে পারে দূর থেকে, যা ভারতের জলপথের জন্য বড়সড় ‘বিপদ’।
Advertisement
এদিকে, পশ্চিমের প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ইসলামাবাদের হাতে রয়েছে বাবর ক্রুজ মিসাইল। স্থলপথে ৭০০ কিমি দূরেও লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। এমনকি, এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করতে পারে। রয়েছে ঘাউরি বা শাহিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। বিখ্যাত ভারতীয় শহর থেকে সেনা ঘাঁটি- যে কোনো অংশেই আক্রমণ হানতে পারে পাকিস্তানের এই সব অস্ত্র।েএ
এখন মূল প্রশ্ন হলো- ভারত এই ধরনের হামলা রুখতে কতটা প্রস্তুত? এককথায় বললে দেশী ও বিদেশি সম্ভারে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত মজবুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের হাতে রয়েছে পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্সের (এএডি) মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ডিফেন্স সিস্টেম।
এর মধ্যে পিএডি শত্রু দেশের ক্ষেপণাস্ত্রকে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগেই গুঁড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, এএডি ধ্বংস প্রক্রিয়া চালাতে পারে ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডল পেরনোর পর। এরই পাশাপাশি বলা যায়, আকাশ সারফেস টু এয়ার মিসাইল (ক্ষেপণাস্ত্র) সিস্টেমের কথা। আকাশপথেই শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রকে ৩০ কিমি পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যেই উড়িয়ে দিতে পারে এটি।
আবার রাশিয়ার এস-৪০০ ও ভারতের খুব বড় ভরসা। এস- ৪০০ হলো সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম। এয়ার ডিফেন্সের কাজও অনায়াসে করতে পারে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ২০০৭ সালে প্রথম রাশিয়ার হাতে আসে এস-৪০০। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু এড়িয়ে যা কিনতে ২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে নয়া দিল্লি।
Advertisement
চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকেও অনায়াসে ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। যদিও এখন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে তা পরীক্ষিত নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এস-৪০০ নিঃসন্দেহে হাইপারসনিক মিসাইলের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রকেও অনায়াসে ধ্বংস করতে পারবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টিভি নিউ, ই টিভি ভারত, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এসএএইচ