আইন-আদালত

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা : ঐতিহাসিক রায় বলছেন আইনজীবীরা

বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছ থেকে সংসদে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছেন আইনজীবীরা।রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, এই রায়কে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দেন। অপরদিকে রায়ে সংক্ষুব্ধ রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে। রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় একথা জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, এই রায়ে দুজন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হক সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। আর অপর বিচারপতি আশরাফুল কামাল ভিন্নমত পোষণ করেছেন বলে জেনেছি। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের রায় হওয়ায় আইনটি এখন বাতিল হয়ে গেল।মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এই আইন করার ফলে জনগণ মনে করছে বিচার বিভাগের ওপর খড়গ সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে আদালত বলেছেন, এই আইন হলে কোর্ট যদি নিরপেক্ষ বিচার করেও এরপরও জনগণের মধ্যে একটা সংশয় তৈরি হবে যে, এটা বোধহয় সঠিকভাবে করা যায়নি।’রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক ক্রান্তিকাল ছিল আমাদের জন্য। স্বাধীনতার পর থেকে ৪০ বছরে বিচার বিভাগের যে অগ্রগতি, সেই অগ্রগতির পথে বিভিন্ন বাধা, স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করা, জনগণের বিচার নিশ্চিত করা এসকল ক্ষেত্রে এই আইনের মাধ্যমে একটা ক্রান্তিকাল তৈরি হয়েছিল। রায়ের মাধ্যমে এটি উত্তোরণ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের জনগণের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হলো। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিচার বিভাগকে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি বলে আমরা মনে করি।’এই রায়ের ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হলো বলে জানান মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হঠাৎ করে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদকে দেয়া হয়। বিচারকদের চাপে রাখতেই এই আইন করা হয়েছিল। এই রায়ে সেটিকে অবৈধ ঘোষণা কর হলো। এই রায় বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।’অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘তিনজন বিচারপতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন এবং বাতিল করেছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিচারকদের যদি পার্লামেন্টের দ্বারা অপসারণের বিধান রাখা হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। তারা বলতে চেয়েছেন এ বিষয়ে আলাদা ট্রাইব্যুনাল থাকে। এই ট্রাইব্যুনালই বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি সম্পন্ন করে।’রায় নিয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এই আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ এবং এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য আমরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি নিয়েছি। আগামী রোববার এই আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে আমরা চেম্বার আদালতে আবেদন করবো।’এফএইচ/বিএ

Advertisement