প্রাণী কেবল একটি নাম নয়; প্রাণীর মাঝে আছে অনুভূতি, জীবন ও প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কুকুর বিশ্বস্ত বন্ধু, বিড়াল স্বাধীন প্রকৃতির, ঘোড়া কৃষি ও পরিবহণে সহায়ক এবং পাখি প্রকৃতির সংগীতকার। তাই প্রতিটি প্রাণীর প্রতি যত্ন ও ভালোবাসা আমাদের দায়িত্ব। আজ বিশ্ব প্রাণী দিবস। প্রতি বছর ৪ অক্টোবর এই দিবস পালন করা হয়, যা সেন্ট ফ্রান্সিসের ভোজ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। এটি মূলত প্রাণীদের কল্যাণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদযাপিত হয়।
Advertisement
বিশ্ব প্রাণী দিবসের মাধ্যমে প্রাণীকল্যাণ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তোলা হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস, যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে প্রাণীদের অবস্থার উন্নতি এবং তাদের সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। জাতি, ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে, বিশ্বের নানা প্রান্তে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়, যাতে সবাই একযোগে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করতে পারে।
প্রাণী সুরক্ষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৩১ সালে, যখন ইতালির ফ্লোরেন্সে আন্তর্জাতিক প্রাণী সুরক্ষা কংগ্রেসে ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তখন থেকেই প্রাণীদের সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে।
আরও পড়ুন
Advertisement
আমরা নিজেদের সৃষ্টির সেরা জীব দাবি করি, তাই প্রাণীজগতের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্বও আছে। প্রকৃতির এই অনন্য সৃষ্টি যেমন কেঁচো, কুকুর, ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণী, প্রত্যেকে আমাদের পরিবেশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তারা খাদ্য চক্রে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং কৃষি উর্বরতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। উদাহরণস্বরূপ, কেঁচো মাটিকে উর্বর করে এবং ফড়িং মশা ও রোগবাহী পোকামাকড় খেয়ে আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু আমাদের অজান্তেই আমরা মানবসৃষ্ট কারণে এই প্রাণীদের সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। অতি জনসংখ্যা, বনভূমি ধ্বংস এবং প্রাণীদের অবাসস্থল নষ্টের ফলে বহু প্রজাতি আজ বিলুপ্তির পথে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বহু প্রজাতি এখন বিপন্ন।
প্রাণীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা আমাদের পরিবেশের সব সদস্যকে বাঁচানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হলে, আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে। প্রাণীদের সুরক্ষা আমাদের হাতে। তাই তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি, শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিশ্ব প্রাণী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, আমরা প্রতিটি প্রাণীর অধিকার ও কল্যাণের জন্য কাজ করবো। আমাদের জীবনযাত্রা ও কর্মকাণ্ডকে এমনভাবে পরিচালনা করবো যাতে প্রাণীদের জীবনের প্রতি ক্ষতি না হয়। জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা আমাদের সবার দায়িত্ব, কারণ আমরা সবাই এই পৃথিবীর অংশ।
Advertisement
আমরা যদি জীবনের প্রতি মূল্যবোধ এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে এগিয়ে যাই, তাহলে নিশ্চিতভাবেই প্রাণীজগতের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সম্ভব। আমাদের প্রয়োজন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি, যাতে প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন
আপনার কাছের মানুষটি আত্মহত্যার কথা ভাবছে না তো? এখনো মনে আছে মীনা-রাজু-মিঠুকে?কেএসকে/এমএস