মা নাছিমা আক্তারকে বলেছিলেন, প্রাইভেটে যাচ্ছি। প্রাইভেট পড়তেও গিয়েছিলেন সাদ আল আফনান। ৪ আগস্ট, আন্দোলন তখন তুঙ্গে, প্রাইভেট পড়া শেষ করে দেরি না করে দ্রুতই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন আফনান। আর বাড়ি ফেরা হয়নি ছেলেটির। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আফনানের মা।
Advertisement
লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী দিতেন আফনান। সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে যুবলীগ হামলা শুরু করে। গুলি চালানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। এক সহপাঠীকে বাঁচাতে গিয়ে আফনানও গুলিবিদ্ধ হন। গুলি লেগে সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন শহরের মাদাম ব্রিজের ওপর। এরপর আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি আফনান। সবার চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আফনান।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল পুরো লক্ষ্মীপুর জেলা। বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎই মিছিল থেকে তারা হামলা চালানো শুরু করে শিক্ষার্থীদের ওপর। পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। হামলায় ব্রিজের ওপর গুলিবিদ্ধ হন আফনান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী কাউছার উদ্দিন বিজয় ও তৌহিদ কবির রাফি এবং সাব্বির হোসেনসহ তিনজন মারা যান। আহত হন পাঁচশোর বেশি শিক্ষার্থী।
আফনান হত্যায় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান করে ৭৫ জনের নামসহ আরও ৭০০জনকে আসামি করে তার মা নাছিমা আক্তার হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতাদের নামও রয়েছে।
Advertisement
আফনানের মা নাছিমা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার তিন মাস আগে স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা যান। সেই শোক সইতে না সইতে একমাত্র ছেলেকে হারালাম। এখন আর আমার কেউ রইলো না। সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। এখন মামলা করেও ভয়ে আছি। আফনানের কথা ভুলতে পারি না। কি দোষ ছিল তার। কি অপরাধ ছিল?’
এসএনআর/এমএস