জাতীয়

পাঁচ সংস্কার কমিশনের সদস্য হলেন যারা

ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে এবার পাঁচটি কমিশনের সদস্যদের নামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনগুলো গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্থার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্থার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনগুলো গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আট সদস্যের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্থার কমিশনের প্রধান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক এবং নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

Advertisement

নয় সদস্যের পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়তে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।

আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবুল নাঈম মমিনুর রহমান। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিচারবিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এ কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।‌ এ কমিশনটিও আট সদস্য বিশিষ্ট।

বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

Advertisement

আট সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরী। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

সবগুলো কমিশন ৩ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাজে হস্তান্তর করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কমিশনগুলোর কার্যালয় সরকার নির্ধারণ করবে। কমিশনের প্রধান ও সদস্যরা সরকার নির্ধারিত পদমর্যাদা, বেতন/সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে কমিশন প্রধান বা কোন সদস্য অবৈতনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চাইলে বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে না চাইলে, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করতে পারবেন।আরও পড়ুন

পাঁচ সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিবে। কমিশন প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দিবে বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছয়টি কমিশন গঠন এবং এতে প্রধান কারা থাকবেন তা জানিয়েছিলেন। সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরানির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাবিদ, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা, ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিশেষজ্ঞ জেসমিন টুলী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল আলীম, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ওপিনিয়ন মেকার ডা. জাহেদ উর রহমান, শাসন প্রক্রিয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বিশেষজ্ঞ মীর নাদিয়া নিভিন, ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লক চেইন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যরাপুলিশ সংস্কার কমিশনে সদস্য হয়েছেন- জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও যুগ্মসচিব মোহাম্মদ হারুন চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক শেখ সাজ্জাদ আলী, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মো. গোলাম রসুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, মানবাধিকার কর্মী এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্যরাহাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বিচারপতি এমদাদুল হক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাইয়েদ আমিনুল ইসলাম, মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র মামলার বাদী এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাজদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন) এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এ কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

দুদক সংস্কার কমিশনের সদস্যরাদুদক সংস্কার কমিশনে সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সোয়াস অধ্যাপক মোস্তাক খান, বার-অ্যাট-ল মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে সদস্যরাসাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান এবং রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ফিরোজ আহমেদ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

আরএমএম/এমএএইচ/