দেশে সিসা দূষণের ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা, গবেষণা ও সচেতনতা তৈরির কাজ ত্বরান্বিত করতে চায় সরকার। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুব সংগঠন এবং উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে তরুণদের উৎসাহ দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে যুব সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও উন্নয়ন সংস্থা পিওর আর্থ বাংলাদেশ যৌথভাবে তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সূচনা করেছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর আলোকির আর্ট স্পেসে আয়োজিত এক যুব কর্মশালায় উভয় সংস্থা আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। এই যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশের সিসা দূষণ মোকাবিলায় তরুণদের সম্পৃক্ত করে একটি নতুন প্রচেষ্টার সূচনা করেছে। পরবর্তী প্রজন্মকে যা তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষায় ক্ষমতায়ন করবে বলে আশা আয়োজকদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু সিসার বিষক্রিয়ার শিকার। এর ফলে প্রতিবছর দেশের শিশুদের মেধা হারাচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্ট, যা দেশের মোট জিডিপির ৬ থেকে ৯ শতাংশের সমান। এটা প্রায় ২৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি করছে। সিসা দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারির পুনর্ব্যবহার, যা ইজিবাইক ও ই-রিকশার মতো প্রায় ৩-৪ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক যানে ব্যবহার করা হয়।
কর্মশালায় পিওর আর্থ বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস লিড মিতালী দাসের পরিচালনায় তরুণ অংশগ্রহণকারীরা সিসার উৎস সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। এতে অ্যালুমিনিয়াম কুকওয়্যার, সিসা-ভিত্তিক রঙ, খেলনা এবং সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি থেকে দূষণের ঝুঁকি তুলে ধরা হয়।
Advertisement
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশে ফরাসি দূতাবাসের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান জুলিয়েন ডিউর বলেন, বিশ্বব্যাপী শিশুরা ব্যাপক এবং উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে তরুণদের নেতৃত্বে সহায়তা করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, সিসা দূষণ একটি নিরব সংকট, যা আমাদের শিশুদের মেধা ও ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং সিসামুক্ত ভবিষ্যত নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
কর্মশালায় দেশের ২০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ জন তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল সিসা দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, জ্ঞান অর্জন এবং দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহফুজার রহমান বলেন, তরুণরা নতুন ধারণা ও জ্ঞান গ্রহণে উদ্যমী। তাদের অংশগ্রহণ সিসা দূষণ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Advertisement
কর্মশালার শেষে অংশগ্রহণকারীরা কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রদায়-ভিত্তিক সচেতনতা কর্মসূচি, স্কুলে প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাডভোকেসি এবং স্থানীয় ও জাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা। অংশগ্রহণকারীরা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং যুব ফেলোশিপ প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দেন।
এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল স্টিয়ারিং কমিটি সিসা দূষণ পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা বৃদ্ধি, গবেষণা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্প্রসারিত উৎপাদক দায় প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে আরও ল্যাব সুবিধা তৈরি করতে একটি ছোট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সিসা দূষণ বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
কেএসআর/জেআইএম